রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬, ০৪:০৬:৫৭

‘এখন আমার মা সংসার চালাবে কেমন করে?’

‘এখন আমার মা সংসার চালাবে কেমন করে?’

সুজন ঘোষ: `আমার বাবা তো কোনো রাজনীতি করত না। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাত। ওরা আমার বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করল কেন? এখন আমার মা সংসার চালাবে কেমন করে?’ চট্টগ্রামের পটিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত মোহাম্মদ হোসেনের (৬০) লাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের উদ্দেশে এ প্রশ্ন ছিল তাঁর বড় মেয়ে লাকী আক্তারের। শোক ও ক্ষোভে লাকী যখন অভিশাপ দিচ্ছিলেন, তখন লাশের একটু দূরে বসে চিৎকার করে কাঁদছিলেন রিকশাচালকের স্ত্রী সাজু বেগম ও সেজ মেয়ে মিনু আক্তার। তাঁদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের পরিবেশ।


গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরনির হাট এলাকায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দিদারুল আলম ও বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল মান্নান খানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ইউনিয়নের শাহ মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ভোট দিতে আসা মোহাম্মদ হোসেন দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করার সময় তাঁর পেটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে দুর্বৃত্তরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মারা যান তিনি। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে মারা যান ওই ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী মো. ইয়াছিন (৩৫)।


মোহাম্মদ হোসেনের ভাতিজা মাহমুদ ইসমাইল বলেন, ‘নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য চাচা (মোহাম্মদ হোসেন) দুপুরের দিকে বাড়ি থেকে বের হন। বাড়ি থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৩০০ ফুট। কিন্তু কেন্দ্রের বাইরে ফকিরনির হাট এলাকায় দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান তিনি। এ সময় কে বা কারা তাঁর পেটের ডান পাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। চাচার চার মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে।’ হাসপাতালে স্বজনেরা নিহত রিকশাচালকের বড় মেয়ে লাকী আক্তারকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কিছুতেই তাঁকে শান্ত করা যাচ্ছিল না। তিনি বলেন, ‘ভোট দিতে যাওয়ার আগে বাবা আমাদের জন্য নাশতা নিয়ে এসেছিলেন। কেন্দ্রে যাওয়ার আগে বলেছিলেন, তোরা নাশতা কর। আমি ভোট দিয়ে আসি। কিন্তু আমার বাবা আর আসল না।’


একটু থেমে আবার বিলাপ শুরু করেন লাকী। বারবার বলতে থাকেন, ‘ও বাবা, তুমি কেন ভোট দিতে গেলে? এখন আমাদের জন্য নাশতা আনবে কে? ছোট দুই ভাইকে আমরা কী জবাব দেব?’ গেলে? এখন আমাদের জন্য নাশতা আনবে কে? ছোট দুই ভাইকে আমরা কী জবাব দেব?’
রাত আটটায় মোহাম্মদ হোসেনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন হাসপাতালের কর্মচারীরা। তখন সেজ মেয়ে মিনু আক্তার বাবার লাশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। বলেন, ‘মরার আগে আমার বাবা অনেক কষ্ট পেয়েছে। এখন পোস্টমর্টেম করলে আরও কষ্ট পাবে। বাবাকে আর কষ্ট দিতে চাই না।-প্রথম আলো

২৯ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে