নিউজ ডেস্ক : রমজান শুরু হতে আর কদিনই বাকি, বেড়েছে রমজানকেন্দ্রিক পণ্যের বেচাকেনা। এই ব্যস্ততার মধ্যেই চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বেড়েছে রমজানের অপরিহার্য পণ্য ছোলা ও চিনির দাম। গত দু’দিনে প্রতিকেজিতে চিনির দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। এদিকে সেঞ্চুরি ছুঁই ছুঁই করা ছোলার দাম নিয়ে চলছে ব্যবসায়ী-প্রশাসনের ‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলা।
খাতুনগঞ্জের সবুজ স্টোর। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ছোলার দাম জানতে চাইলেই, হাসিমুখে বসতে বলেন সবুজ স্টোরের ম্যানেজার মিলন দে। তার দাবি, গত দু’মাস ধরেই ছোলার একই রেটে চলছে। অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৬ এবং বার্মার ছোলা ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আরো একটু আগ বাড়িয়ে বলেন, ছোলার দাম ঠিকই আছে, সাংবাদিকরা শুধু শুধু বেশি বেশি লিখছে।
অথচ ঠিক তার পাশের পাইকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মুসা ব্রাদার্সের সাংবাদিক পরিচয়ে গোপন করে ছোলার দাম জানতে চাইলে ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৬ ও বার্মার ছোলা ৯২ টাকায়।’ এদিকে নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারে খুচরা অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ৯০ ও বার্মার ছোলা ৯২ থেকে ৯৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের খাজা ট্রেডার্সের মালিক আবদুল মান্নান বলেন, ‘২০১৫ সালে প্রচুর ছোলা আমদানি হওয়ায় দাম পড়ে গিয়েছিল। অনেকেই লোকসান কাটিয়ে উঠতে না পেরে এবার আমদানি করেনি। ছোলার আমদানি যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে আমদানিকারকও সংখ্যা কমে যাওয়া। এতে ছোলার বাজারটা কিছু একচেটিয়া কারবারির হতে চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে, এবছর হয়তো অনেক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারকে ছোলা ছাড়াই ইফতার সাড়তে হবে।’
যদিও আসন্ন রমজান মাসে ছোলা, তেল, চিনি, ডাল প্রভৃতি পণ্যের বাজারে দামবৃদ্ধির কারসাজিতে ধরা পড়লেই জরিমানার পরিবর্তে সরাসরি জেলখানায় পাঠানো হবে বলে ব্যবসায়ীদেরকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক এ হুঁশিয়ারি দেন।
সভায় ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে পাইকারি বাজারে অস্ট্রেলিয়ার ছোলার দাম নির্ধারণ করা হয় ৭৫ টাকা থেকে ৭৬ টাকা, বার্মার ছোলা ৮৫ টাকা, মটর ৪০ টাকা, মসুর ডাল ৯০ টাকা থেকে ৯১ টাকা।
বাড়ছে চিনির দাম
খাতুনগঞ্জে গত দু’দিনে প্রতিকেজিতে চিনির দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা, এক মাসে বেড়েছে ১০ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবি, বেসরকারি চিনি কারখানা থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ না পাওয়ায় দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল পাইকারিতে প্রতি কেজি চিনি লেনদেন হয়েছে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকায়। মিলগেট থেকে সরাসরি উত্তোলনযোগ্য প্রস্তুত এ চিনি সবচেয়ে বেশি লেনদেন হচ্ছে। অথচ দু’দিন আগেই মানভেদে চিনি বিক্রি হয়েছিলো ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়।
মঙ্গলবার সকালে পাইকারিতে প্রতি মণ সিটি সুগার ২ হাজার ২৮০ থেকে ২ হাজার ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে একই পরিমাণ মণ এস আলম সুগার বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২৬০ থেকে ২ হাজার ১৮০ টাকায়।
অথচ গত ১৫ দিন আগে পাইকারিতে মণপ্রতি চিনি লেনদেন হয়েছিলো ১ হাজার ৮৩০ থেকে ১ হাজার ৮৩৫ টাকায়। প্রতি মণ এস আলম সুগার ১ হাজার ৮৩০ থেকে ১ হাজার ৮৩৫ টাকায় এবং একই পরিমাণ সিটি সুগার বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮৪০ থেকে ১ হাজার ৮৪৫ টাকায়। সে হিসেবে পনের দিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি চিনিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকার বেশি।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ইবনাত ট্রেডিংয়ের ম্যানেজার কাঞ্চন মজুমদার বলেন, ‘পাইকারিতে কয়েক মাস ধরে চিনির দাম অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। বেসরকারি চিনি কারখানা থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ না পাওয়ায় দাম বেড়েছে।’
এদিকে রাতারাতি দাম চিনির বাড়ানোয় বিপাকে পড়েছেন খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারা। মঙ্গলবার দুপুরে খাতুনগঞ্জে কথা হয় খুচরা বিক্রেতা জসিম উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, ‘আধ কিলোমিটারের দুরত্বে তারা পাইকারি ও আমরা খুচরা বিক্রি করছি। কিন্তু সকাল হলেই শুনি চিনির দাম বেড়েছে। অথচ দু’দিন আগেও ৫২ থেকে ৫৪ টাকায় চিনি বিক্রি হয়েছে। আজ তা ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ এসময় তিনি খুচরা বাজারে ৬০ থেকে ৬১ টাকায় চিনি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান।
পাইকারি ক্রেতা আব্দুল মোনাফ বলেন, ‘উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধের অজুহাতে চিনির দাম বেড়েছে। অথচ আমরা যতদুর জানি পরিশোধন কারখানার মালিকেরা চিনির দাম বাড়াননি।’
চড়া হচ্ছে ডাল ও মসলার বাজার
রমজানকে সামনে রেখে দাম বেড়েছে সব ধরনের ডাল জাতীয় পণ্যেরও। তবে সুখবর হলো, পেঁয়াজের দাম আছে স্থিতিশীল। মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিকেজি ইন্ডিয়ান নাসিক পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ টাকায়, চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ ও দেশি (বড়) রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়, মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়, খেসারি ৭৫ থেকে ৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে গরম হয়ে উঠেছে মসলার বাজার। পাইকারি বাজারের সাথে বিস্তর ফারাক খুচরা বাজারের। পাইকারি উন্নতমানের জিরা প্রতিকেজি ২৮০ টাকায় বিক্রি হলেও, খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ থেকে ৫০০ টাকায়। মানভেদে প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ১২৫০ টাকায়। পাইকারি বাজারে হলুদ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১২৮ টাকায়, কিসমিস প্রতিকেজি ২৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি কিশমিশের দাম পড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। দারুচিনি ১৮০-২২০ টাকা কেজি, কাঠবাদাম ৫০০ টাকা, জয়ফল ৫০০-৭০০ টাকা, ভুসি ৫৫০-৭২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে খাতুনগঞ্জের সাতকানিয়া স্টোরের মালিক শাহজাহান আলী বলেন, ‘বাজারে মসলার দাম স্বাভাবিক রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আমদানি হয়েছে। রোজায়ও দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। খুচরা বিক্রেতারা কারশাজি করে দাম বাড়াচ্ছে।’ বাংলামেইল
৩১ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম