শুক্রবার, ০৩ জুন, ২০১৬, ১২:৩৪:২৬

যে কারণে নির্বাচন কর্মকর্তার ওপর ক্ষুব্ধ এমপি

যে কারণে নির্বাচন কর্মকর্তার ওপর ক্ষুব্ধ এমপি

মহিউদ্দীন জুয়েল: বাঁশখালীতে নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের মারধর করার পেছনে কারণ তার আত্মীয় স্বজনদের নির্বাচনে পাস করানো। তৃণমূলের বাধা ও সুপারিশকে উপেক্ষা করে নিজ ক্ষমতা বলে তিনি পছন্দের লোকজনকে প্রার্থী করেছিলেন। তাই অনেকে হয়েছেন স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী। স্থানীয়রা জানান, পূর্ব ঘোষিত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত আগামীকাল ৪ঠা জুন বাঁশখালীর ১৪টি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার এমপি মোস্তাফিজুর রহমান নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদকে চড় থাপ্পড় ও মারধর করেছেন- এমন অভিযোগের পর কমিশন সেদিন রাতেই বাঁশখালীর সব ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করেন। এর আগে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার পরও ব্যক্তি পছন্দের কারণে স্থানীয়ভাবে এবার মনোনয়ন পাননি ৩ প্রভাবশালী প্রার্থী। তাই তারা স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে চার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা সবাই সাংসদ মোস্তাফিজের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বলে জানান অনেকে।

সেখানকার আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতা জানান, নির্বাচনে বাহারছড়া ইউনিয়নে মনোনয়ন পেয়েছেন তাজুল ইসলাম। তিনি এমপির ব্যক্তিগত সহকারী। গত বুধবার নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদ মারধরের পর বলেছিলেন, তাজুল ইসলাম তাকে একটি তালিকা দিয়েছিলেন এমপির নির্দেশে। যেখানে দলীয় অনেকের নাম ছিল এজেন্ট হিসেবে। কিন্তু তিনি সেই তালিকা অনুযায়ী কাজ না করায় তাকে মারধর করেছেন এমপি ও তার অনুসারীরা। নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার পাশাপাশি সহকারী তাজুল এক মাস আগে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হয়েছেন। তাজুলের পাশাপাশি সরল ইউনিয়নে মনোনয়ন পেয়েছেন এমপি মোস্তাফিজের চাচা রশিদ আহমদ চৌধুরী। একইভাবে ছনুয়ায় মনোনয়ন পেয়েছেন আরেক আত্মীয় জিল্লুর করিম। আর খালাতো ভাই কফিল উদ্দিন পেয়েছেন বৈলছড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।

এ বিষয়ে এমপি মোস্তাফিজ বলেছেন, নিয়ম-কানুন মেনে তাদের দলীয়ভাবে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আত্মীয় বলে তারা কী অন্যায় করেছেন? আওয়ামী লীগের এক মনোনয়ন বঞ্চিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জানান, দলীয়ভাবে কয়েক বছর আগে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত এমন ৫ জনের মধ্যে ৪ জনই এবার দল থেকে মনোনয়ন নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরও এবার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের কারণে মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন পুকুরিয়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আকতার হোসেন, সাধনপুরের আহসান উল্লাহ চৌধুরী, কাথারিয়ার জয়নাল আবেদীন চৌধুরী ও পুঁইছুড়ির মাঈন উদ্দিন।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মারধর করা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদের বিরুদ্ধে এমপির পক্ষ নিয়ে মিছিল সমাবেশ করেছে সাংসদ মোস্তাফিজের সহকারী তাজুল ইসলাম। সকাল সাড়ে ১০টায় ১০০ লোক নিয়ে তাজুল ওই নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে এলাকায় মিছিল করেন। তারা এই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করে। পরে পুলিশ তাদের সেখান থেকে বের করে দিলে এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বাঁশখালী থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মিছিল হয়েছে সত্যি। তবে আমরা তাদেরকে বেশিক্ষণ মিছিল নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার সুযোগ দেইনি। পরিস্থিতি শান্ত আছে। এমপির হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করছেন নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম।


এমপি মোস্তাফিজুর রহমান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন। গতকাল সকালে বাঁশখালী পৌরসভা সদরে এমপির অনুসারীরা কয়েক দফা মিছিল-সমাবেশ করছেন। এ সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন এমপির ব্যক্তিগত সহকারী ?তাজুল ইসলাম। তিনি কর্ণফুলী বড়উঠান ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক সূত্র জানায়, আলোচিত এ তাজুল ইসলামের জন্যই পছন্দের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা না পেয়ে চরম উত্তেজিত হন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। এজন্য উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে অফিসে এসে প্রকাশ্যে মারধর করেন।

এদিকে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত মামলা দিলেই মামলা রেকর্ড করবো। অন্যদিকে নির্বাচন কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আবার বাঁশখালী পৌরসভায় মিছিল-সমাবেশ হওয়ায় বর্তমানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।-এমজমিন

৩ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে