মহিউদ্দীন জুয়েল: সাম্প্রতিক সময়ে হুমকিতে ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আকতারের পরিবার। এ কারণে উদ্বিগ্ন ছিলেন মাহমুদা আক্তার মিতু। চিন্তা-ভাবনা করছিলেন ওআর নিজাম রোডের বাসা ছেড়ে দেয়ার। প্রতিবেশীদের এমন কথা তিনি জানিয়েছিলেনও। তার আশঙ্কাই জীবন দিয়ে প্রমাণ করলেন মিতু। সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পর এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। বাবুল আকতার আলোচনায় আসেন ২০০৮ সালে। সে সময় চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় একের পর এক অভিযান চালিয়ে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে এনেছিলেন সৎ ও নির্ভীক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আকতার। ওই সময় মানুষ রাতে ডাকাত আতঙ্কে ঘুমাতে পারতো না। বাবুল আকতার রাত জেগে পাহারা দিয়ে ডাকাতমুক্ত করেছিলেন হাটহাজারী থানাকে। আরও নানা কাজে তিনি হাটহাজারীর লোকজনের মনে ঠাঁই করে নেন। যেদিন তিনি বদলি হয়ে যাবেন সেদিন হাজার হাজার মানুষ থানার সামনে অবস্থান নেন। গাছ ফেলে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে তার বদলি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। কারণ একটাই বাবুল আকতারের মতো সাহসী ও সৎ পুলিশ অফিসারকে ছাড়বেন না। কেবল হাটহাজারী নয়, কক্সবাজারসহ একাধিক অঞ্চলে মাদকমুক্ত অভিযান, স্বর্ণ চোরাচালান কিংবা জঙ্গি তৎপরতা। সব ক্ষেত্রেই সফল হয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তবে ব্যক্তি জীবনে তিনি সৎ হলেও তার কাজে ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন দুর্বৃত্তরা।
চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার থেকে ঢাকায় নতুন কর্মস্থলে যোগ দেয়ার আগে তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন ‘২০০৮ সালের মার্চে র্যাব থেকে বদলি হয়ে সিএমপিতে আসি। এরপর কোতোয়ালি জোন, হাটহাজারী সার্কেল, কক্সবাজার জেলা ঘুরে আবারও সিএমপিতে। শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ফিরে আবার সিএমপিতেই। চট্টগ্রাম অঞ্চলেই চাকরি করাকালীন সময়ে আমার দুটি সন্তানের জন্ম হয়েছে। এখানে থেকেই পদোন্নতি পেয়েছি। কাজ করতে গিয়ে সহযোগিতা পেয়েছি সহকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মী ও সাধারণ মানুষের। তাদের সকলের কাছেই কৃতজ্ঞ। চেষ্টা করেছি সর্বদা সততা ও ন্যায়ের সঙ্গে কাজ করতে, সত্যের পক্ষে থাকতে। তবে পুলিশের চাকরিতে সকলকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। হয় অভিযোগপত্র না হয় চূড়ান্ত রিপোর্ট। এর মাঝামাঝি কোনো অবস্থানে থাকার সুযোগ নেই। সে কারণে অনেকের বিরাগভাজন হয়ে থাকতে পারি। তবে এতটুকু বলতে পারি নিজ স্বার্থের জন্য কিছু করিনি। ক্ষমা চাইছি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে।’ তার এই স্ট্যাটাসে শঙ্কা ফুটে ওঠেছিল। এটা সত্য অনেকে মেনে নিতে পারেননি তাকে। একের পর এক অভিযান কোণঠাসা করে ফেলেছিলো সন্ত্রাসীদের। বাবুল আকতার যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের ২৪তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা হয়ে ২০০৫ সালে তিনি যোগ দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে। ২০০৮ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম (সেবা)। ২০০৯ সালে পান পিপিএম (সাহসিকতা) পদক। ২০১০ সালে অর্জন করেন আইজিপি ব্যাজ। ২০১১ সালে পেয়েছেন পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল পুরস্কার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (সাহসিকতা)। বেসরকারি পর্যায়ে ২০১২ সালে সিঙ্গার-চ্যানেল আই (সাহসিকতা) পুরস্কার লাভ করেছেন বাবুল আক্তার। আর চট্টগ্রাম রেঞ্জে চারবার অর্জন করেছেন সেরা সহকারী পুলিশ সুপারের মর্যাদা। ২০০৮ সালে র্যাব থেকে সিএমপির কোতোয়ালি জোনের এসি হিসেবে বদলি হন। পুলিশে কাজ করার সময় অপরাধীদের একের পর ধরার কৌশল দেখে হতবাক হয়ে যেতেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে নগর পুলিশ কমিশনার।
কোতোয়ালি থানার টাইগারপাস এলাকায় এক ছিনতাইকারীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রসহ তিনি আটক করার ঘটনায় সাহসিকতার পরিচয় দেন। তারপর ২০০৫ সালে উদ্ঘাটন করেন কিশোরগঞ্জের সিক্স মার্ডার মামলার রহস্য। তখন তিনি র্যাবে। এরপর আগ্রাবাদের ডাবল মার্ডার হত্যার ঘটনায় যখন পুলিশ অন্ধকারে তখন বাবুল আকতার সেই ঘটনার রহস্যও তুলে ধরেন সবার কাছে। সর্বশেষ জঙ্গি আস্তানায় হানা দেয়ার পাশাপাশি রিয়াজউদ্দিন বাজারে পাইকারি ব্যবসার আড়ালে অবৈধ স্বর্ণের গুদাম থাকার ঘটনা প্রথম ফাঁস করেন এই পুলিশ সুপার। গতকাল রোববার দুপুরে স্ত্রীর মরদেহের পাশে কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছিলেন বাবুল আকতার। তিনি এই সময় সাংবাদিকদের বলেন, দেশের জন্য কাজ করেছি। আর তাই সন্ত্রাসীরা আমার স্ত্রীকে রেহাই দিলো না।-এমজমিন
৬ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ