মহিউদ্দীন জুয়েল: চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুর মোবাইলে বাচ্চাকে খুব সকাল বেলায় স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে এসএমএস পাঠানোর কথা বলা হয়েছে সেই ধরনের এসএমএস পাঠানো হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল। তিনি বলেছেন, নিহত পুলিশ সুপারের স্ত্রী রাতে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে আগের রাতে এসএমএস পেয়ে ঘটনার দিন খুব সকাল বেলায় বাচ্চাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হন। ওই এসএমএসে লেখা ছিল ৭টা ২০ মিনিটে অ্যাসেম্বলি। তাই তিনি খুব সকালে বাসা থেকে বের হয়ে জিইসি মোড়ে গিয়ে অপেক্ষা করছিলেন স্কুলের বাসের জন্য। ঠিক সেই সময় ৩ সন্ত্রাসী মোটরসাইকেলে এসে তাকে হত্যা করে। ঘটনার পরপরই গতকাল চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই এসএমএসের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখেন তাদের অফিসিয়াল নম্বর থেকে কোনো এসএমএস পুলিশ সুপারের স্ত্রীকে পাঠানো হয়নি।
কেবল তাই নয়, নিয়ম অনুযায়ী ওই ধরনের এসএমএস পাঠানোর আগে কলেজটিতে ৩টি ধাপে তা অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওইদিনের অনুষ্ঠানের জন্য এই ধরনের কোনো এসএমএস পাঠানো হয়নি তার মোবাইলে। তবে পূর্ব নির্ধারিত এই অনুষ্ঠানের জন্য বৃহস্পতিবার বাবুল আকতারের ছেলেসহ অন্য বাচ্চাদের ক্লাসেই তা জানিয়ে দেয়া হয়। এই বিষয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট কলেজের প্রিন্সিপাল আবু নাসের মো. তোহা বলেন, এই ধরনের কোনো এসএমএস আমাদের এখান থেকে যায়নি। গতকাল আমরা এই ধরনের খবর জানার পর এডমিন ও আইটি শাখা চেক করে নিশ্চিত হয়েছি। যদি এই খবরের সত্যতা সত্যি হয় তাহলে ওই সন্ত্রাসী গ্রুপ আগে থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে দ্রুত বাসা থেকে বের করতে এই কাজ করেছে।
এদিকে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত সেই মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে এই ঘটনায় সর্বশেষ গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ধরা পড়েনি কেউ। অন্যদিকে মিতুর স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আকতার নিজে বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। মামলায় কাদেরকে আসামি করা হয়েছে কিংবা কতোজন আসামি হয়েছেন সে বিষয়ে কোনো কিছু বলতে নারাজ পুলিশ কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে বলে একজন কর্মকর্তা বলেছেন। ঘটনা তদন্তে গতকাল পর্যন্ত ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঘটনাস্থল জিইসি মোড়ের ওয়েল ফুডের প্রহরীও রয়েছেন। নিহত পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ গতকাল নগরীর সব বয়সী মানুষের হাতে দেখা গেছে। এ নিয়ে সর্বত্র উঠেছে নিন্দার ঝড়। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনায় জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার কথা বলা হলেও অতীতে বাবুল আকতারের সাহসী নানা অভিযান ও রহস্য উদঘাটনের অন্তত ১০টি ঘটনা পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন।
তিনি জানান, সর্বশেষ জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার, তাদেরকে গ্রেপ্তার ও পরিকল্পনা ধ্বংস করার ঘটনায় পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের ওপর ক্ষুব্ধ উগ্রপন্থিরা। তার মনোবল ভেঙে দিতেই এই ধরনের কাজ করা হয়েছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে চেষ্টা চলছে। দুই একদিনের মধ্যে রহস্য উদঘাটিত হবে। চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি আমরা পাঁচলাইশের রাস্তার পাশ থেকে গভীর রাতে উদ্ধার করেছি। ঘটনা তদন্তে তার পুরনো কেসগুলো আবার এনালাইসিস করছি।
সেইসব ঘটনার জের ধরে কেউ হত্যাকাণ্ড ঘটালো কিনা তা দেখা হচ্ছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, হত্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের বাসায় নজরদারি করছিলো। বিশেষ করে কখন তার বাচ্চা স্কুলে যেতো, কে নিয়ে যেতো, স্ত্রী কখন বের হতো এইসব তথ্য তারা রাখছিলো খুব গোপনে। গত রোববার মাত্র একদিনের জন্য বাচ্চাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খুন করা হলো তাকে-বিষয়টি যে পরিকল্পিত তা প্রমাণিত হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী একজন কনস্টেবল গত কয়েক মাস ধরে তার ছেলেকে স্কুলে আনা-নেয়া করলেও ওইদিন রাতে তাকে আর ফোন করা হয়নি বলে সাদ্দাম নামের ওই পুলিশ সদস্য সাংবাদিকদের জানান।-এমজমিন
৭ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সবুজ/এসএ