বৃহস্পতিবার, ০৯ জুন, ২০১৬, ০১:৩৪:৫৫

‘অনুমানের’ ওপর চলছে তদন্ত

‘অনুমানের’ ওপর চলছে তদন্ত

চট্টগ্রাম: ‘অনুমান’ আর ‘সন্দেহ’। এই দুইয়ের ওপর ভিত্তি করে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা। কারা মারলো, কেন মারলো এসব প্রশ্নের কোনো জবাব মিলছে না ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পরও। নগর গোয়েন্দা পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কাউন্টার টেররিজম ইফনিটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত ১০টি টিম গত তিন ধরে চষে বেড়াচ্ছেন অপরাধীদের খুঁজতে। যদিও এই ঘটনায় ঘাতকদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে এখনো ধরা পড়েনি সেই ৩ সন্ত্রাসী।


তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পাওয়া তথ্য মতে, পরিকল্পনা করে যে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছে তা অনেকটা নিশ্চিত। এই মুহূর্তে তাই ঘটনার সঙ্গে কোন পক্ষ জড়িত তা আগে বের করার চেষ্টা চলছে। পুলিশের হাতে এখন বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যার পেছনে দুটি পক্ষকে বড় করে দেখছেন গোয়েন্দারা। তবে সবকিছুই অনুমান ও সন্দেহের ওপর। জঙ্গি আস্তানায় হানা ও একের পর এক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় শুরু থেকে পুলিশ প্রশাসন দাবি করে আসছে এই ঘটনায় তারা জড়িত। বাবুল আক্তারের পরিবারকে জঙ্গি নাম দিয়ে হুমকি ধমকি দেয়ার পর এই ধরনের সন্দেহ দানা বাঁধছে হত্যাকাণ্ডের পর থেকে। নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, হত্যার আলামত দেখে তা জঙ্গিদের কাজ বলে আমরা সন্দেহ করছি। কিন্তু তা নিশ্চিত নই। এই ঘটনার সঙ্গে জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীরাও জড়িত থাকতে পারে।


মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল চট্টগ্রামের সাবেক শিবির নেতা আবু নাছের হন্নু (৪৫) নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে আটক হওয়া ওই ব্যক্তি হত্যার সঙ্গে জড়িত কিনা তা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে ধরা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য। তিনি আরও বলেন, আটক ব্যক্তি শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি পুলিশ সুপারের স্ত্রীকে যখন হত্যা করা হয় তখন সেখানে কেন ছিলেন তা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।


এর আগে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মোক্তার আহমেদের নেতৃত্বে মঙ্গলবার রাতভর হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের সরকারহাটে নছরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। নছর ১৯৯৫ সালে বিদেশ চলে যান।  ২০০৯ সালে আবার ফিরে আসেন।
তার বিরুদ্ধে সীতাকুন্ড থানায় হত্যা মামলা রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে মোটরসাইকেলে সন্ত্রাসীদের পালিয়ে যাওয়ার পেছন পেছন যে কালো রংয়ের পাজেরোটি চলে যায় সেটিও ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা তা নিশ্চিত হতে পারছে না গোয়েন্দারা। সন্দেহ করা হচ্ছে গাড়িটি খুনিদের সহযোগিতা করতে সেখানে এসেছিল। মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হলেও সেই পাজেরোটি এখনো পাওয়া যায়নি।

পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, জঙ্গিদের জড়িত থাকা ও তাদের মতো সোনা চোরাচালানিদের সম্পৃক্ততার দুটি বিষয় আমরা সন্দেহের তালিকায় রেখেছি। অনুমান করছি ওই মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় পেছন পেছন যে পাজেরোটি দ্রুত গতিতে চলে যায় সেটিও জড়িত থাকতে পারে। তিনি আরো বলেন, সব কিছু খোলাসা হতে হয়তো আর বেশি দিন লাগবে না। দিনরাত মাঠে থেকে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। আশা করছি, সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ে যাবে। আমরা কোন পক্ষ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এসপি বাবুল আক্তার বদলি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বদলির তথ্য জানতো না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে অনেকটা অন্ধকারে ছিলেন তারা।

গতকাল মৌখিকভাবে কয়েক দফা পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে বাবুল আক্তারের বদলি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এর বিপরীতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাবুল আক্তারের বদলির আদেশ জারি করেনি। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এক আদেশে তাকে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করে। সরকারি কাজের সুবিধার জন্যই এমনটা করা হয়েছে। মৌখিকভাবে এমনটা জানানোর পাশাপাশি ফ্যাক্সযোগে পুলিশ সদর দপ্তরের আদেশের কপি পাঠিয়ে দেন। এদিকে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগ দিতেই এসপি বাবুল আক্তার গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় চলে আসেন। এরপরই ঘটে যায় তার জীবনের এক হৃদয় বিদারক কাহিনী। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এসপি বাবুল আক্তারের বদলি প্রেক্ষাপট, জঙ্গি দমনে সাহসী ভূমিকা, সোনা চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে নানা অভিযান সম্পর্কে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাবুল আক্তারের বিষয়গুলো খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দেখভাল করছেন। সময়ে সময়ে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন। নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। তবে চট্টগ্রাম থেকে বাবুল আক্তারের বদলি সম্পর্কে ভিন্ন তথ্য পাওয়ার পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনেকটা নড়েচড়ে বসেছে। এখন ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেন, এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় ছাড়া বদলির নজির খুব কম। অতি জরুরি কোনো বিষয় না হলে এমনটা ঘটার কথা নয়। এর আগে গত ৫ই জুন দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে ও গুলি করে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে হত্যা করে। চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে লোমহর্ষক এ ঘটনাটি ঘটে। এখনও পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি। এখনও পর্যন্ত তাদের ধারণা, এসপি বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এ কারণে জঙ্গিরাই এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকতে পারে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরকে নানা তথ্যের উপর জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।-এমজমিন

৯ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে