নিউজ ডেস্ক : গত ফেব্রুয়ারিতে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যই দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিজের ক্ষেত্রেই সত্যি হলো। নগরীর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলো নিয়ে তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (নগর গোয়েন্দা দক্ষিণ) বাবুল আক্তার বলেছিলেন, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলো বিলবোর্ডের সঙ্গে নেমে যাচ্ছে। ক্যামেরাগুলো আবার লাগানো হবে কি-না এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ক্যামেরাগুলো থাকলে অপরাধ ও যানজট নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়।
যে পুলিশ অফিসার নিজের জীবন বাজি রেখে অপরাধ দমনে কাজ করেছেন, আজ তার স্ত্রীই খুন হলেন দুর্বৃত্তদের হাতে।
হত্যাকাণ্ডের পর খুনের মোটিভ উদঘাটনে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ! নগরীর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলো না থাকাই এর মূল কারণ বলে মনে করছেন বিজ্ঞ মহল।
২০১৪ সালের জুনে মোট তিন ধরনের ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। এর মধ্যে পিটিজেড ক্যামেরা (যেটা গাড়ির নম্বর সংরক্ষণ করে), ফেস ডিটেক্টর (মিটিং-মিছিল, সমাবেশসহ জনসমাগমের চিত্র নিখুঁতভাবে ধারণ করে) এবং ১২০০ টিবিএল ক্যামেরা (যেগুলো ওভারঅল ভিউ ধারণ করে)।
নগরীর বিভিন্ন স্পটে এখন রয়েছে মাত্র ১৩টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। এতে ঘটে যাওয়া আলোচিত চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটনে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা যে পথ দিয়ে পালিয়েছে সেই প্রবর্তক, গোলপাহাড়, চট্টগ্রাম মেডিকেল, চকবাজার, পাঁচলাইশ মোড়ের কোনো স্পটেই ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ছিল না। ফলে হত্যাকাণ্ডের পর নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় খুনিরা।
ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য দেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছিল সিএমপি। এখান থেকে অপরাধ ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য মনিটরিং করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হতো।
এসব ক্যামেরার অধিকাংশই লাগানো হয়েছিল বিলবোর্ডের খুঁটির সঙ্গে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে নগরীর বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযানে খুঁটিগুলো কেটে ফেলায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাগুলোও নামিয়ে ফেলতে হয়।
সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ২৬ পয়েন্টের প্রত্যেকটিতে চার-পাঁচটি করে ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল।
মিতু হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা পালিয়ে যাওয়ার ভিডিও খুব কাছ থেকে রেকর্ড করার কথা ছিল পার্শ্ববর্তী একটি কালীমন্দিরের সিসিটিভি থেকে। কিন্তু ঘটনার দিন কালীমন্দিরের সিসিটিভি ফুটেজ মেমরি থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।
কালীমন্দিরের সিসিটিভির ফুটেজ ডিলিট করায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, চেহারা লুকাতেই ফুটেজ ডিলিট করা হয়েছে। তবে কে ডিলিট করলো সেই সিসিটিভি ফুটেজ সেটাই এখন প্রশ্ন।
মিতু খুন হন সকাল সাড়ে ৬টায়, আর ফুটেজ ডিলিটের সময় সকাল ৯টা ২২ মিনিট। হত্যাকাণ্ডের ২ ঘণ্টা ৫২ মিনিট পর ফুটেজটি ডিলিট করলো কারা।
কেউ জোর করে মন্দিরে ঢুকে সিসিটিভি ডিলিট করবে, এতটা সাহস কারো থাকার কথা নয়। বিষয়টি নিয়ে রীতিমত মন্দিরের পরিচালকও হতবাক হয়েছেন।
মন্দির সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলেও জেনারেটরের মাধ্যমে অটোমেটিক ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়র কথা। কিন্তু কেন হলো না বা কারা ডিলিট করলো বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি নজরে আছে। কারা কালীমন্দিরের ভিডিও ফুটেজ মুছেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
৯ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম