সালমা বেগম: স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় এতিমদের ইফতারের জন্য থাকে বাড়তি আয়োজন। প্রতিদিনই নিয়ম করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আসে ইফতার। সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার আবাসিক শিক্ষক ও সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মো. আফসার আলী শেখ জানান, উন্নতমানের খাবারে সচরাচর ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতিমখানার পক্ষ থেকেই এ আয়োজন করা হয়ে থাকে। এতিমদের জন্য ইফতারি আয়োজনের মধ্যে রয়েছে মুড়ি, বুট, পেঁয়াজু, আলুরচপ, বেগুনি, কলা, জিলাপি, শরবতসহ বিভিন্ন আইটেম। ইফতারের সময় হলেই তারা এক হয়ে ইফতারিতে বসে যায়। এছাড়া, রাতে খাবার ও সেহরি তারা একসঙ্গে করে। এছাড়াও প্রতিবছরই নাম না জানা এক ব্যক্তি প্রতিদিন ইফতার পাঠান এখানকার এতিমদের জন্য। এতিমখানায় ছয় বছর থেকে আঠারো বছর পর্যন্ত শিশুদের রাখা হয়।
আফসার শেখ বলেন, ছোট যারা রোজা রাখতে পারে না তাদের জন্য দুপুরে ডাল- ভাতের ব্যবস্থা থাকে। তবে অভ্যাস করানোর জন্য ইফতার ও সেহরি তারা সবার সঙ্গেই করেন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, অন্য এতিমখানাগুলো কেমন এটা আমি জানি না। তবে আমাদের এই এতিমখানা সবচেয়ে ভালো। রমজানে ইফতারে নানা রকম আয়োজন থাকে আমাদের জন্য। তেরো বছর ধরে এতিমখানায় আছেন ফাতেমা। তিনি বলেন, খুবই যত্ন সহ আমাদের এখানে রাখা হয়েছে। ইফতারের সময় আমরা নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে প্রতিটি রুমে ইফতার পরিবেশন করি। সবাই মিলেমিশে খাবার খাই। বিশাল বড় সুন্দর একটি পরিবার আমাদের। এই এতিমখানার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য চার বছর বয়সী নিশি। নিয়ম অনুযায়ী ছয় বছরের শিশুদের রাখার কথা থাকলেও পিতা-মাতা না থাকায় কম বয়সেই রাখা হয়েছে ছোট্ট নিশিকে। নিশি জানায়, ইফতারে সে পেঁয়াজু, মুড়ি, খেজুর ও কলা দিয়ে ইফতার করে।
মেয়েদের হোস্টেলের ভারপ্রাপ্ত হোস্টেল সুপার সালেহা বেগম জানান, ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এখানে কাজ করছেন। নিজে এতিম হওয়ায় জীবনের বেশি সময় কেটেছে এই এতিম শিশুদের সঙ্গে। সালেহা বেগম বলেন, আমাদের এখানকার মেয়েরা বিভিন্ন জায়গায় সরকারি চাকরি করছে। তারা অনেকেই এখন ডোনার হিসেবেও আছেন। বাচ্চাদের পেন্সিল, খাতা, কলম অনেক কিছুই তাদের কাছ থেকে আসে। শতাব্দী প্রাচীন স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় বর্তমানে ২৬০ জন এতিম শিশু আছে। এদের মধ্যে ১৩৯ জন ছেলে। ১২১ জন মেয়ে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাবা-মা হারা অসহায় নিঃস্ব এই এতিমরা এখানে থেকে লেখাপড়া করে। এতিমখানার পক্ষ থেকে এসব ছেলেমেয়েদের যাবতীয় খরচ বহন করা হয়। বাবা-মা হারানো সমাজের নিঃস্ব, বিপন্ন, অসহায় ছেলেমেয়েরাই মূলত এতিমখানায় থাকে। একসঙ্গে পড়াশোনা করে। শিশু শ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত বিনা খরচে এতিমদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে এতিমখানার নিজস্ব স্কুলে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলেদের জন্য রয়েছে পড়াশোনার ব্যবস্থা। আর মেয়েদের জন্য রয়েছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার ব্যবস্থা। এরপর এতিমদের ভর্তি করে দেয়া হয় পাশের ফরিদউদ্দিন সিদ্দিকী উচ্চ বিদ্যালয়ে। এখান থেকে এসএসসি পাসের পর এতিমরা তাদের ইচ্ছেমতো যে কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের পড়াশোনার খরচ এতিমখানা কর্তৃপক্ষই বহন করে। এতিমখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন লোকের অনুদান, সাহায্য ও যাকাতের ওপর চলে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া সরকারিভাবেও এতিমদের জন্য প্রতিমাসে বরাদ্দ দেয়া হয়। যাদের পিতা মারা গেছে তারাই কেবল আইন অনুযায়ী এতিম হিসেবে গণ্য হয়। তবে যে শিশুদের পিতা-মাতা কেউ নেই তাদের ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।-এমজমিন
১০ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/সবুজ/এসএ