মুহাম্মদ সেলিম : এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া সদস্যদের একজন ওয়াসিম ওরফে অসু। শুধু তা-ই নয়, খুনের পরিকল্পনা, মিতুকে গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে খুনের পর পালিয়ে যাওয়া পর্যন্ত যাবতীয় ছক তৈরিকারীদের একজন যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর অনুসারী এ ক্যাডার। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলা ও নগরীতে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই এবং সরকারি বাগান লুটের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘মিতু হত্যাকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের একজন এই ওয়াসিম। সে নিজেই মিতুকে গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করে। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে সে মিতু খুনের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। হত্যার দায় স্বীকার করে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে।’
রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিএনপি ক্যাডার ওয়াসিমের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা, অস্ত্র, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বেশ কিছু মামলা রয়েছে। সে রাঙ্গুনিয়া থানার একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী।’ স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মিতু হত্যায় জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার ওয়াসিমের গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুন নবী। একসময় ছিঁচকে চুরির মাধ্যমে অপরাধজগতে হাতেখড়ি হয় ওয়াসিমের। পরে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত এনডিপিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করে ওয়াসিম। পরে সাকার সঙ্গে বিএনপিতে যোগ দেয় সে। সাকা চৌধুরীর সান্নিধ্যে এসেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে ওয়াসিম। গড়ে তোলে নিজস্ব বাহিনী। এলাকার ইটভাটা থেকে চাঁদা উত্তোলন, ডাকাতি, এমনকি সরকারি বাগানের গাছ ডাকাতিতে নেতৃত্বে দেয় সে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে এলাকার জনসাধারণ।
একসময় একে-৪৭সহ ফটিকছড়ি থেকে গ্রেফতার হয়ে কয়েক বছর কারাগারে আটক ছিল সে। ২০১২ সালের ১১ আগস্ট রাঙ্গুনিয়া ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ মিয়া চৌধুরীকে কুপিয়ে হত্যা করে ওয়াসিম। এর কিছুদিন পর মো. জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে সে। যুদ্ধপরাধের দায়ে সাকা চৌধুরী গ্রেফতার হওয়ার পর এলাকাছাড়া হয় ওয়াসিম। সে নগরীতে অবস্থান করে গড়ে তোলে নিজস্ব আন্তজেলা ডাকাত বাহিনী। এ ডাকাত সদস্যদের নিয়েই বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি করে বেড়াত সে। বছর দুয়েক ধরে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করে ওয়াসিম। সোর্স হিসেবে কাজ করার সুবাদে পুলিশের অনেক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, ৫ জুন নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন এসপি বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতারে কাজ করছে ডিবি, র্যাব, সিআইডি, পিবিআই ও সিটিআইসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্য সংস্থাগুলো।-বিডি প্রতিদিন
২৭ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ