চট্টগ্রাম : পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার অন্যতম সহযোগী ও অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে নাম আসে এহতেশামুল হক ভোলার। ভোলাকে গত সোমবার ভোরে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে তার দুর্ধর্ষ অপরাধ কর্মের নানা কাহিনী। ভোলা চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার রাজাখালি এলাকায় ‘দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী’ হিসেবে পরিচিত, স্থানীয়দের এমনটাই দাবি।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার ও মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, মিতু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী ও অস্ত্রসরবরাহকরী এহতেশাম ভোলা রাজাখালী এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। তার বাবার নাম মৃত সিরাজুল হক।
তিনি জানান, ভোলা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছে নগরীর বাকলিয়া থানার রাজাখালি হাইওয়ে সড়কসংলগ্ন অবৈধ দখলকৃত বাড়িতে। এখানে তার একটি কলোনি ভাড়া দেওয়া আছে। একাধিক খুন ও ডাকাতি মামলার আসামি ভোলা নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা দাবি করে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল ভোলা।
স্থানীয়রা জানান, কলোনিতে থাকা শ্রমজীবী মানুষগুলোই তার পুঁজি। যে পিস্তল দিয়ে গুলি করে মিতুর হত্যা নিশ্চিত করা হয়েছে সেটি সরবরাহ করেছিল ভোলা। হত্যার পর খুনিদের কাছ থেকে অস্ত্রটি আবার সে ফেরতও নিয়ে নেয়। মিতু হত্যার মূল নির্দেশদাতা হিসেবে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় থাকা আলোচিত মুছার সঙ্গে অস্ত্রসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার শেয়ার রয়েছে ভোলার।
বাকলিয়া রাজাখালী এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোলা চাক্তাই রাজাখালি এলাকার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে । তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ উচ্চবাচ্য করারও সাহস করে না। ভোলার বড় ভাই শরীফুল হক কাজলও পেশাদার সন্ত্রাসী। দীর্ঘদিন কারাভোগ করার পর সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে বের হয়েছে কাজল। চাক্তাই আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সভাপতি দুলাল চক্রবর্তীর ছেলে তপন চক্রবর্তীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছিল ভোলা ও তার অনুসারীরা। পরবর্তীতে ভোলার ভয়ে সব সম্পত্তি বিক্রি করে দুলাল ভারতে চলে যায় বলেও এলাকাবাসী জানায়।
স্থানীয়রা আরো জানায়, ভোলার মামা মৌলভী লোকমান রাজাখালি হাইওয়ে সড়কের পাশে জমি কেনেন প্রায় ১৪ কাঠা। সেই জমি নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে ঝামেলা হলে ভোলাকে নিয়ে আসে মামা লোকমান। পরবর্তীতে কলোনিসহ সেই জমি দখল করে মামা লোকমানকে বের করে দেয় ভোলা।
রাজাখালির একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, মুছা ভোলার ব্যবসায়ীক পার্টনার। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাক্তাই রাজাখালিতে প্রতিদিন ট্রাকভর্তি ভুষি নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। ট্রাক থেকে ভুষি নামানোর আগেই গাড়িপ্রতি একহাজার টাকা চাঁদা দিতে হতো ভোলাকে। আজগর নামের এক ব্যক্তি ভোলার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে চাঁদার এসব টাকা তুলে।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, নগরীর বাকলিয়া ও চান্দগাঁও থানায় ভোলার বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে চারটি হত্যা, দুটি অস্ত্র মামলা ছাড়াও রয়েছে ডাকাতি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলা। -রাইজিংবিডি
২৮ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম