চট্টগ্রাম : এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যা করে দ্রুত মোটরসাইকেলে চেপে সটকে পড়ছিলেন তিন কিলার। মোটরসাইকেলে ছিলেন কিলার মুছা, নবী ও ওয়াসিম।
মোটরসাইকেলে করে কাপাসগোলা বড় গ্যারেজ এলাকায় চলে যান তারা। কিন্তু সেখানে মোটরসাইকেলে গোলযোগ দেখা দেয়। মোটরসাইকেলটি ফেলেই যে যার মতো পালিয়ে যান। ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল নিয়ে চলে কাহিনী। এ নিয়ে তখন তৈরি হয় ধুম্রজাল।
গত ৫ জুন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যার দু’দিন আগেও একবার হত্যার পরিকল্পনা নিয়েছিল কিলাররা। কিন্তু সেবার ফিরে আসে কিলাররা। স্বীকারোক্তিতে তারা এ কথা বলেছেন।
এদিকে বাসায় ফিরে ওয়াসিম টিভি চ্যানেলের স্ক্রলে দেখতে পান, জিইসি মোড়ে এসপির স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুন হয়েছেন। ওই স্ক্রল দেখেই ওয়াসিম জানতে পারেন, একটু আগে তারা যাকে খুন করেছেন তিনি এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী।
এটি দেখেই ওয়াসিম ফোন করেন মুছাকে। বলেন, এসপির স্ত্রীকে যে খুন করা হবে সেটি কেন তাদের আগে বলা হয়নি। এ কথা জানালে তারা খুনে অংশ নিতেন না।
তখন মুছা উল্টো ওয়াসিমকে ধমক দিয়ে বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। করলে তোকেও খুন করব। আমি পুলিশের সোর্স। সব ঝামেলা আমি সামলাব।
এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় রোববার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওয়াসিম এসব কথা বলেন।
অপর আসামি আনোয়ার বলেছেন, তিনি মিতুর বাসার সামনে পর্যবেক্ষণে ছিলেন। খুনের আগে তাদের ৫০০ টাকা ও খুনের পরে এক হাজার টাকা করে দেন মুছা। মিতুকে হত্যার দু’দিন আগেও তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।
মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত ওয়াসিম ও আনোয়ার রোববার চট্টগ্রামে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হারুন-অর রশীদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তারা বলেন, মুছার ভাড়াটে খুনি হিসেবে টাকার লোভেই তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
ওয়াসিম ও আনোয়ার জবানবন্দিতে বলেছেন, তাদের বলা হয়েছিল, জঙ্গি কানেকশন আছে এমন এক মহিলাকে হত্যা করতে হবে। ওই মহিলাকে হত্যা করলে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যাবে।
এ কথা বলেই মুছা সহযোগী খুনিদের ভাড়া করেছিলেন। গত ৫ জুন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যার দু’দিন আগেও একবার হত্যার পরিকল্পনা নিয়েছিল কিলাররা।
একই ঘটনাস্থল জিইসির মোড়ে গিয়েছিল ৭ খুনি। বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু সেদিনও যথারীতি বাচ্চাকে স্কুলবাসে তুলে দিতে বের হয়েছিলেন। কিন্তু কিলার ওয়াসিমের একজন পরিচিত লোক জিইসি মোড়ে তাকে দেখে ফেলায় এবং লোকজন বেশি থাকায় সেদিন হত্যাকাণ্ড ঘটাননি তারা।
এর ঠিক দু’দিন পর তারা এ হত্যকাণ্ড সংঘটিত করেন। তবে তারা যে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে খুন করতে যাচ্ছেন সেটি জানতেন না বলেও জবানবন্দিতে আদালতকে জানিয়েছেন।
এ হত্যাকাণ্ডে মুছাকে কারা নির্দেশ দিয়েছিল কেনই বা মুছা বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা নিলেন তা এখনো অজানাই রয়ে গেল। জবানবন্দিতেও এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য আসেনি।
হত্যা মিশন সম্পন্ন হওয়ার পর মুছা, নবী ও ওয়াসিম মোটরসাইকেলে করে কাপাসগোলা বড় গ্যারেজ এলাকায় চলে যান। সেখানে মোটরসাইকেলে গোলযোগ দেখা দেয়ায় সেটি ফেলে রেখে যে যার মতো পালিয়ে যান।
২৮ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম