চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার গ্রামাঞ্চলে অনেকেই লালনের দর্শনে বিশ্বাসী। এই বিশ্বাসের চর্চা ও বিস্তারে অনেক গ্রামেই গড়ে উঠেছে আখড়া ও আশ্রম। অনেক জায়গায় লালনের পাশাপাশি চলে বিজয় সরকার, পানজু শাহ, শাহ আব্দুল করিম কিংবা বিহাল শাহ’র গানও। কিন্তু সম্প্রতি দুটি আশ্রমে হামলার ঘটনায় আতংকে রয়েছেন বাউল-সাধকরা।
বাউল সাধক আবুল কাশেম চিশতী জানান, জেলায় শতাধিক আশ্রম ও আখড়াবাড়ি আছে। আর সব মিলিয়ে শিল্পী আছে ছয় হাজারের মতো। তিনি আরও জানান, জেলার রাখাল শাহ, বিশু শাহ, জুলমত শাহ, জয়রামপুরের শান্তি নিকেতন, আবুল শাহ’র আখড়াবাড়ি, গোবিন্দহুদার মঙ্গল শাহ’র আশ্রম, দর্শনার রশিক শাহ, হোসেন আলী শাহ, বেহাল শাহ, খোদাবক্স শাহ ও বাবা সন্ন্যাসীর আশ্রম’সহ বেশকিছু স্থানে নিয়মিত সাধু-সঙ্গ হয়ে থাকে।
এ অবস্থায় গত ১৬ জুলাই জীবননগর উপজেলার একতারপুর গ্রামের মুকুল শাহ’র আশ্রমে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। হামলাকারীরা আশ্রমের তিনজনকে কুপিয়ে জখম করে। ভাংচুর চালায় আশ্রমে। এ বিষয়ে জীবননগর থানায় একটি মামলা হয়েছে।
এ হামলার সপ্তাহ দুয়েক পর ৩০ জুলাই রাতে দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দপুর জুলমত শাহ’র আখড়াবাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। হামলাকারীরা দুই সাধুর চুল কেটে নেয়। পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বাদ্যযন্ত্রে। এ ঘটনাতেও মামলা হয়। তবে আশ্রম দুটিতে এখন বাউল সাধকদের আর দেখা যায় না।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশিদুল হাসান জানান, দুটি ঘটনায় আলাদা আলাদা মামলা হয়েছে। মামলার কার্যক্রম চলছে।
চুয়াডাঙ্গা বাউল কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ফকির মহিউদ্দীন বলেন, ‘এ ধরনের নির্যাতন ও অত্যাচারের লক্ষণ ভালো নয়। বাউল ফকিরদের আচার-অনুষ্ঠান মন খুলে করতে দিতে হবে।’
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আবু সাঈদ বলেন, ‘সাধু বাউলদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন কোনওভাবেই সহ্য করা হবে না।’
জেলা বাউল পরিষদের সভাপতি ধীরু বাউল বলেন, ‘বাউল-সাধকদের ওপর আরেকটি হামলা হলে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এতে আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির অবনতি হলে আমরা দায়ী থাকবো না।’
জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস বলেন, ‘বাউল সাধকদের ওপর এ ধরনের অত্যাচার কেন হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর বলেন, ‘বাউল, সাধক কিংবা ফকিররা হচ্ছেন সহজ-সরল মানুষ। তাদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ -বাংলা ট্রিবিউন
২৫ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম