চুয়াডাঙ্গা: মাটির ঘর। ওপরে টিনের চাল। সে টিনের রং ঝলসে গেছে। দেখলেই বোঝা যায় ভাঙা ঘর। সেই ঘরে নতুন বউ হয়ে এসেছেন এক বিদেশিনী।
সম্প্রতি প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন মালয়েশিয়ান তরুণী ইসহারি। ওই নারী চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামে প্রেমিক জহুরুল ইসলামের বাড়িতে উঠেছেন। ইসহারি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তাঁর নাম রাখা হয়েছে জহুরা খাতুন। বিয়ে করে ঘর-সংসার শুরু করেছেন। প্রতিদিন এই দম্পতিকে দেখতে তাঁদের বাড়িতে আসছে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ।
গত শুক্রবার ওই বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, ইউনুস আলীর ছেলে জহুরুল চার বছর আগে মালয়েশিয়ায় যান। একটি কারাখানায় চাকরি নেন। সেখানে আগে থেকে চাকরি করতেন ইসহারি। একসঙ্গে চাকরি করতে করতে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিন বছর চাকরি করার পর জহুরুল ধরা পড়েন মালয়েশিয়ান পুলিশের হাতে। বৈধ কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই সময় ইসহারি আইনি লড়াই করে মুক্ত করেন জহুরুলকে। এর পর থেকে তাঁদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে ফরিদপুর গ্রামে ফিরে আসেন জহুরুল। তাঁর বাবা একজন কৃষক। বাড়ি ফিরে জহুরুল বাবাকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করা শুরু করেন। তিনি আসার ১০ দিন পর গত ২৫ মে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসেন ইসহারি। একই দিন দুজন চুয়াডাঙ্গা আদালতে গিয়ে মুসলিম রীতি অনুযায়ী বিয়ে করেন। ইসহারি জন্মসূত্রে হিন্দু ধর্মের। তাঁর বাবার নাম সুন্দরাম। বাড়ি মালয়েশিয়ার ইপে এলাকায়।
ওই গ্রামের যুবক শামিম হোসেন বলেন, ‘জহুরুলের পরিবার খুব দরিদ্র। এত দরিদ্র যে, ছোট্ট একটা ভাঙা টিনের ঘর ছাড়া তাদের তেমন কিছু নেই। গ্রামে সে ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। দরিদ্রতা দূর করার জন্যই চার বছর আগে মালয়েশিয়া গিয়েছিল। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মালয়েশিয়ার স্থায়ী নাগরিক হিসেবে ওই তরুণী তাকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতাও করে। ওই তরুণী গ্রামে আসার পর গ্রামবাসীর কাছে জহুরুল এসব স্বীকার করেছে। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় বিয়ে করে তারা এখন সুখে আছে। ’
ইসহারি (জহুরা খাতুন) মালয়েশিয়ায় থাকতেই কিছু বাংলা শিখেছেন। তিনি বলেন, ‘জহুরুলকে আমি ভালোবেসেছি। তাকে ছাড়া জীবন কাটাতে পারব না বলেই ছুটে এসেছি বাংলাদেশে, তার কাছে। তারা গরিব হতে পারে, কিন্তু তাদের বাড়ির সবার মন খুব ভালো। জহুরুলের মা-বাবা খুবই ভালো। তাঁরা আমাকে খুব আদর করেন। এখানে আমি খুব ভালো আছি। ’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার খুব ভালো লেগেছে। স্বামীর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন আমারও দেশ। আমার ইচ্ছা, মালয়েশিয়ায় আমরা দুজন চাকরি করে দেশে টাকা পাঠাব। গ্রামে বাড়ি করব। তারপর একদিন স্থায়ীভাবে চলে আসব এই গ্রামে। ’
জহুরুলের মা জাহেদা খাতুন বলেন, ‘চার বছর আগে মাঠের শেষ সম্বল চার বিঘা জমি বিক্রি করে জহুরুলকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। বাড়ির জমিটুকু ছাড়া আমাদের আর কোনো জমি নেই। ’ ছেলের বিদেশিনী বউকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘খুব ভালো মেয়ে। তার সব কথা আমরা বুঝতে পারছি না। তবে, এটুকু বুঝতে পারছি, সে আমাদের খুব সমীহ করছে। ’
জহুরুল জানান, খুব শিগগির তাঁরা মালয়েশিয়া যাবেন। চাকরি করবেন। বছরে অন্তত একবার বেড়াতে আসবেন মা-বাবার কাছে।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি আকরাম হোসেন বলেন, ‘মালয়েশিয়ার তরুণী ফরিদপুর এসে বিয়ে করার কথা শুনেছি। ’
৮ জুলাই ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর