শনিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, ০৩:৫৬:২৯

বরই চাষে ভাগ্য বদলালো এই যুবকের!

বরই চাষে ভাগ্য বদলালো এই যুবকের!

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর গ্রামের যুবক ফরহাদ হোসেন সোহাগ। লেখাপড়া শেষ করে অন্যান্য বেকার যুবকদের মতো চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষি কাজে নেমে পড়েন। জমি লিজ নিয়ে ফলসহ বিভিন্ন ধরণের সবজির আবাদ শুরু করেন। কিন্ত ভাগ্য যেন কোনভাবেই সহায় হচ্ছিল না। বার বারই লোকসানের মুখে পড়েন। অবশ্য, দমে যাননি তিনি। শেষে চলতি মৌসুমে বৈরী আবহাওয়াকে মোকাবেলা করে নিজ গ্রামে সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে কাশ্মীরি আপেল কুলের বাগান করে সফল হলেন এই যুবক। খবর ইউএনবি’র।

এখন মোটা অঙ্কের লাভের আশা করছেন। বিদেশি ফল দেশের মাটিতে ফলিয়ে বেশ খুশি তিনি।

ফরহাদ হোসেন সোহাগ বলেন, ‘৬ মাস আগে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে চারা আনা হয়। এতে প্রতি পিচ চারায় ৮৫-৯০ টাকা খরচ পড়ে। সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে মোট সাড়ে ৭০০ চারা লাগানো হয়। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।

তিনি জানান, তার বাগানে লাগানো প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণে ফল এসেছে। এ বছর প্রতি গাছ থেকে ৩০-৪০ কেজি করে বরই পাওয়া যাবে। সামনে বছরে বরইয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে বলে ধারণা করছি।

সোহাগ আরও বলেন, এভাবে একটানা ৫-৭ বছর পর্যন্ত ফল বিক্রি করা যাবে। ঢাকাতে ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমি এখনও বিক্রি শুরু করিনি। দিন দশেক পর থেকে শুরু করবো। সব মিলিয়ে এ বছর ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবো বলে আশাবাদি তিনি।

শিক্ষা জীবন শেষে চাকরি না করে কৃষি কাজে কেন এলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে ফরহাদ বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই কৃষির প্রতি আলাদা ভালো লাগা ছিল। তাই লেখাপড়া শেষ করে অন্যান্য বেকার যুবকদের মতো চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে কৃষি কাজে নেমে পড়ি। জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ শুরু করি। কিন্ত ভাগ্য যেন কোনভাবেই সহায় হচ্ছিলো না।

তিনি বলেন, বছর চারেক আগে লোকনাথপুর ফায়ার সার্ভিস অফিসের পাশেই সড়কের দু’ধারে প্রায় ৭ বিঘা জমিতে পেয়ারার বাগান গড়ে তুলি। পেয়ারা চাষেও আমি লাভের মুখ দেখতে পাইনি। এরপর ৩ বিঘা জমিতে লাউয়ের আবাদ করি। তাতেও মোটা অঙ্কের লোকসান হয়। এক কথায় যাই আবাদ করছি সেটাতেই লোকসান হচ্ছিল। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। বর্তমানে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে আপেল কুলের চারা লাগানোর পর ওই জমিতেই ফুলকপির আবাদ করেছিলাম। আড়াই লাখ টাকার মত লাভও হয়েছে। এখন দেশের দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছে বরইর বাগান দেখতে। যা আমাকে আরও অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে তুলেছে।

ফরহাদ বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ১ বিঘা জমিতে ১৩০-১৪০টি চারা রোপণ করা যায়। ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ১ বিঘা জমিতে বরইয়ের বাগান করে বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। আর কুল চাষেই ঘুরে যেতে পারে বেকার যুবকদের ভাগ্যের চাকা।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিউর রহমান জানান, রৌদ্রজ্জ্বল, উচুঁ এবং সুনিষ্কাশিত জমিতে কুল বাগান ভালো হয়। যে বাগানে যত বেশি রোদের কিরণ লাগবে সেই জমির কুল বেশি মিষ্টি হবে। ৫-৬ হাত দূরত্বে গাছের চারা রোপন করতে হয়। তুলানামূলক রোগ-বালাইও কম। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসা হচ্ছে। নতুনভাবে কেউ যদি কাশ্মীরি আপেল বরই বাগান করেন এবং আমাদের পরামর্শ চান তাহলে তাকে অবশ্যই সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল শুভ জানান, কুল সুস্বাধু রসালো একটি ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে