কক্সবাজার থেকে : স্কুলের ক্লাসে অংক কষতে গিয়ে ভুল করেছেন শিক্ষক। এরকম ভুলের জন্য মুচকি হেসেছে ছাত্রী। একারনে শিক্ষকের মারধর ও থাপ্পড়ে হতভাগি ছাত্রী জ্ঞান হারিয়েছে। সেই জ্ঞান হারা ছাত্রীকে স্কুল থেকে ঘর-ঘর থেকে মরিচ্যা বাজারের গ্রাম্য ডাক্তারের ক্লিনিক হয়ে শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ে জ্ঞান ফিরেনি সেই ছাত্রীর। রামু উপজেলার খুনিয়া পালং ইউনিয়নের রাবেতা হাসপাতালের জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত আল-ফুয়াদ একাডেমীতে ঘটেছে এমন অনাকাংখিত ঘটনাটি।
জানা যায়, রাবেতা আল ফুয়াদ একাডেমীর (উচ্চ বিদ্যালয়) শিক্ষক নাজমুল হাসান ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ফারহানা হামিদকে মারধর এবং কানের গোড়ায় থাপ্পড় দিলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অজ্ঞান অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যালয়ের মেঝেতে ফেলে রাখা হয় তাকে। এভাবে ফেলে রাখার এক পর্যায়ে সহপাঠীরা ফারহানা হামিদকে প্রথমে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
পরিবারের সদস্যরা মাথায় পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। শেষে তাকে স্থানীয় মরিচ্যা বাজারে পল্লী চিকিৎসক নছরুল্লাহর কাছে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত ফারহানা হামিদকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে অনেক চেষ্টার পর রাত-১০টা নাগাদ ফারহানার হুঁশ ফিরেনি বলে জানানা তার পিতা আবদুল হামিদ। এ ব্যাপারে জানার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষক নাজমুল হাসানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করে তাকে না পেয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের এক সহকারি শিক্ষক জানান, ‘আমি যতটুকু জানি শিক্ষক নাজমুল তাকে একটা থাপ্পর মেরেছে। এতে এতক্ষণ অজ্ঞান হওয়ার মানে বুঝলাম না।
জানা গেছে, গত ৩ বছর পূর্বে অভিযুক্ত শিক্ষক নাজমুল হাসান নিজের তথ্য গোপন করে আল ফুয়াদ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিএসসি শিক্ষক হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করে। পরবর্তীতে তাকে কাগজ দেওয়ার জন্য বলা হলে সে মরিচ্যা এলাকার লজিং মাস্টার হিসেবে ঠিকানা দেখিয়ে কাগজপত্র দাখিল করে।
আবার ওই কাগজে দেখা যায়, তার বাড়ী চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায়। কিন্তু তিনি বলে বেড়ান তাঁর বাড়ী রাঙ্গামাটি। এত কিছুর পরও তাকে বিদ্যালয়ে রেখে দেন প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা দিদার চৌধুরীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি মোবাইল রিসিভড করেন না।
স্থানীয় অভিভাবক মহল জানান, নাজমুল হাসান মূলত এমপিওভুক্ত কোন শিক্ষক নয়, তিনি প্যারা শিক্ষক। ইতিপূর্বেও এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে শিক্ষক নাজমুল। যার ফলে তাকে বিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করার জন্য একাধিকবার অভিভাবকরা অভিযোগ করলেও প্রধান শিক্ষক রহস্যজনক কারনে তাকে বহিস্কার করেন না।
তবে ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাস্টার ইসমাঈল হাসান অভিযুক্ত শিক্ষকের হাতে স্কুল ছাত্রী আহতের সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি একজন প্যারা শিক্ষক। তাকে বিদ্যালয় থেকে বহিস্কারের জন্য গত ৩ দিন পুর্বেও একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত এবং জামায়াত ঘরানার চিকিৎসক ও সাবেক রাবেতা হাসপাতালের অন্যতম পরিচালক ডাঃ রহিমুল্লাহর তত্বাবধানে পরিচালিত স্কুলের নাজমুল নামের এই শিক্ষকের চালচলন ও কর্মকাণ্ডও রহস্যজনক বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
এমটিনিউজ/এসএস