নিউজ ডেস্ক: নাম তার ‘লাইল্যা’। মালিক বলছেন, গায়ের রং লাল বলেই দেওয়া হয়েছে এমন নাম। এ পর্যন্ত ৬ মণ ওজনের গরুটির দাম উঠেছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। কিন্তু এ দামেও লাইল্যাকে বিক্রি করবেন না তার মালিক। তাঁর চাওয়া ৭ লাখ টাকা।
মিয়ানমার-সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফে কোরবানির পশুর হাটে বড় বড় কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। আনা হয়েছে হাজারো গরু-মহিষ। একেকটি গরুর দাম পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা। লোকজন এসব গরু কিনছেনও বেশ। আজ শুক্রবার বিকেলে টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠের পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, লোকজনের আগ্রহ বড় গরুর দিকেই।
লাইল্যার মালিক টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউছুফের দাবি, তিনি গত বছরও এই হাটে পাঁচ/ছয় লাখ টাকায় গরু বিক্রি করেছেন। তাই সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দাম উঠলেও, লাইল্যাকে বিক্রি করছেন না।
হাটের দক্ষিণ কোণে দেখা গেল কালো রঙের বিশাল এক গরু। আশপাশে উৎসুক মানুষের ভিড়। কাপড় দিয়ে গরুটি ডেকে রাখা হয়েছে। এর নাম ‘পাগলা চান্দু’। পাগলার দাম হাঁকা হচ্ছে ৫ লাখ টাকা। গরুটির মালিক টেকনাফের কচুবনিয়া গ্রামের চান মিয়া (৪০) বলেন, এ পর্যন্ত পাগলার দাম উঠেছে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। তিনি গরুটি আরও বেশি দামে বিক্রির আশা করছেন।
চান মিয়া বলেন, পাঁচ মাস আগে তিনি ৭৯ হাজার টাকা দিয়ে গরুটি শাহপরীর দ্বীপ করিডর থেকে কিনেছিলেন। এটি মিয়ানমার থেকে আনা উন্নতজাতের গরু। তখন গরুটির ওজন ছিল ৪ মণের কাছাকাছি। এখন ওজন হবে ৯ মণের বেশি। চান মিয়ার আশা, আজ রাতের মধ্যেই এটি বিক্রি হয়ে যাবে। কারণ রাত পোহালেই তো ঈদ।
হাটের আরেক কোণে ‘রাজা’কে ঘিরে রেখেছে লোকজন। লাল রঙের মোটাসোটা গরুটির গলায় ফুলের মালা ঝোলানো। অনেকে রাজার সঙ্গে মুঠোফোনে সেলফি তুলছেন। গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এর ওজন প্রায় ৮ মণ। রাজার মালিক বদিউর রহমান (৩৮) বলেন, বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ৪ লাখ টাকার বেশি দামে গরুটি কেনার আগ্রহ দেখিয়েছেন।
কথা হয় কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা প্রবাসী গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে। গরু কেনার পর তা ট্রাকে ওঠানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। দাম কত জিজ্ঞেস করলে গিয়াস বলেন, সাড়ে তিন লাখ টাকায় গরুটি কিনেছেন তিনি।
হাটের ইজারাদার সুলতান মাহমুদ বলেন, হাটে বিক্রির জন্য আনা হয়েছে ছোট-বড় প্রায় ৭ হাজার পশু। এর মধ্যে গরু প্রায় ৫ হাজার। অধিকাংশ গরু শাহপরীর দ্বীপ করিডর দিয়ে আমদানি করা। এরই মধ্যে চার হাজারের বেশি গরু-মহিষ বিক্রি হয়ে গেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, মিয়ানমারের গরু মোটা, তাজা ও কম দাম হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এসব পশুর চাহিদা বেশি। অনেকে মিয়ানমারের বড় গরু কিনে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ঢাকায় সরবরাহ করছেন।
টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস সুপার এ এস এম মোশারফ হোসেন বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বাড়লেও তার কোনো প্রভাব শাহপরীর দ্বীপ করিডরে পড়েনি। আজ শুক্রবার বেলা তিনটা পর্যন্ত এই করিডরে আসে পাঁচ শতাধিক গরু-মহিষ। আর গত আগস্ট মাসে আনা হয়েছে ১৪ হাজার ৪০৮টি পশু। এগুলোই টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজারের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খান বলেন, গরু নিয়ে যাওয়ার সময় চাঁদাবাজিসহ নানা হয়রানি রোধে পুলিশ মাঠে রয়েছে। এ ছাড়া জাল নোট বন্ধে এবং ছিনতাইকারী ও পকেটমার ধরতে কোরবানির হাটে পুলিশের সার্বক্ষণিক তৎপরতা আছে।-প্রথম আলো
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস