শনিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৮:৫৫:৪৬

‘আমরা ক্ষুধার্ত, খাবার দিন’ : ত্রাণ ও সাহায্যের জন্য রোহিঙ্গাদের ৪ কি.মি দীর্ঘ লাইন!

 ‘আমরা ক্ষুধার্ত, খাবার দিন’ : ত্রাণ ও সাহায্যের জন্য রোহিঙ্গাদের ৪ কি.মি দীর্ঘ লাইন!

নিউজ ডেস্ক : কক্সবাজার-টেকনাফ রোডের দুপাশে ৪ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ লাইন প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গাদের। খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে রাস্তায় যাকেই পাচ্ছে তার দিকেই হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। ভাষার সমস্যার কারণে কথা না বলে পেটে হাত দিয়ে দেখাচ্ছে আমরা ক্ষুধার্ত, খাবার দিন। কোনো যানবাহন বা কোনো অপরিচিত মানুষ দেখলেই সাহায্যের জন্য হাত দিচ্ছে।

শনিবার সরেজমিনে কক্সবাজার -টেকনাফ রোডের উখিয়ার কুতুপালং ও ঘুমদুম এলাকায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। এদিকে বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে ত্রাণ বিতারণ করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব অপ্রতুল বলে জানা গেছে।

হালিমা খাতুন নামের এক রোহিঙ্গা নারী দুধের শিশুসহ চার সন্তান নিয়ে কক্সবাজার -টেকনাফ রোডের কুতুপালং এলাকায় দাড়িয়ে আছেন। স্বামীসহ পরিবারের অন্যান্যদের হত্যা করেছে বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা। সন্তানদের নিয়ে কোনো মতে প্রাণ নিয়ে এসেছেন। পাঁচদিন সন্তানদের তেমন কিছু খেতে দিতে পারেননি। বৃস্টি কাদার মধ্যে দাড়িয়ে আছেন। মাথা গোজার ঠাই নেই। কুতুপালং এর একটি পাহাড়ে আশ্রয় নিতে গিয়েছিলেন। কিন্ত প্রশাসনের লোকজন তাড়িয়ে দিয়েছে বলে তিনি জানান। এই বৃস্টি কাদার মধ্যে সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডুর আছিয়াবং এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছেন আসিয়া খাতুন। মিয়ানমার সেনা ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের নিশংসতায় হারিয়েছেন পরিবারের সবাইকে। দুই বছরের শিশুকে নিয়ে চারদিন দুর্গম পথে পায়ে হেঁটে এসে আশ্রয় নিয়েছেন কুতুপালং এলাকায়। চারদিন পর শুক্রবার এসে কিছু শুকনো খাবার খেয়েছেন। শিশু পুত্রকে খাইছেন বিস্কুট।

শনিবার সকাল থেকে সে ভাত খাওয়ার আবদার করছে। কিন্তু আশিয়া বিবি কোথায় পাবে ভাত। এ জন্য সকাল থেকে কান্না শুরু করেছেন। দু-একজন তার কান্না দেখে কিছু টাকা সাহায্য দিলেও তা দিয়ে ভাত কিনে দিতে পারছেন না।

এরকম পরিস্থিতি লাখো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন টং ঘর তুলে দিচ্ছেন। কিন্ত তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী জানান, এসব রোহিঙ্গাদের মাথা গোজার ঠাই না হলে মহাবিপর্যয় দেখা দেবে।

এদিকে রোহিঙ্গা সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু করেছে। চলমান সহিংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে গত ১৪ দিনে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী তিন হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে এবং রোহিঙ্গাদের ১০ হাজার গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

বাড়িহারা এসব মানুষের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন তারা।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার বরাতে পাওয়া তথ্য উল্লেখ করে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরা জানায়, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা মুসলমানের সংখ্যা ৬ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি। রাখাইনের বাইরে রোহিঙ্গাদের এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। তবে প্রকৃত তথ্য হল, এর চেয়ে অনেক বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।

অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন ছেড়ে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়াতে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ১ লাখ ১২ হাজার রোহিঙ্গা। ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ৩ বছরে তারা মালয়েশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন।

গত আগস্টে নতুন করে সহিংসতা শুরুর আগে জাতিসংঘ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছেন। এ সময় আরও ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়ার কথাও বলা হয়।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবে রয়েছে ২ লাখ, পাকিস্তানে সাড়ে ৩ লাখ, মালয়েশিয়ায় দেড় লাখ, ভারতে ৪০ হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০ হাজার, থাইল্যান্ডে ৫ হাজার এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন।

এদিকে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর গত দুই সপ্তাহে প্রায় ৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছেন বাংলাদেশে। তবে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) মতে, এর সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে