নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমারের আরকান রাজ্য থেকে টেকনাফের দূরত্ব বেশ কয়েক মাইল। তাও আবার কেউ সহজ রাস্তায় আসতে পারেননি। কখনো পাহাড়ি পথ, কখনো জঙ্গল, নদী আর বিল পার হয়ে আসতে হয়েছে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে। কারো কারো এই পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে ১২-১৩ দিন।
এই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে শুধু নিজের জীবনই বাঁচাননি। বাঁচিয়েছেন নিজের স্ত্রী-সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা-মাকে। বৃদ্ধ বাবা-মাকে বোঝা মনে করেননি রোহিঙ্গা মুসলমানেরা। তাদের কাঁধে করে বহন করে নিয়ে এসেছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। এমন অসংখ্য রোহিঙ্গার দেখা মিলছে টেকনাফে। যারা ঝুড়ি বা চেয়ারে বসিয়ে বার বানিয়ে বাবা-মাকে তাতে বসিয়ে কাঁধে করে বহন করে নিয়ে এসেছেন। পথে অনেক ঝক্কি-ঝামেলায় বাবা-মা তাদের কাছে বোঝা হয়নি।
রাজার বিলের লামার পাড়ার আমান উল্লাহ। ৮০ বছরের বৃদ্ধা মাকে কাঁধে করেই নিয়ে আসেন টেকনাফে। তিনি বলেন, মাকে কোথায় রেখে আসবো। মাকে তো ওরা মেরে ফেলবে। তিনি বলেন, মাকে কাঁধে নিয়ে কখনো পাহাড় বেয়েছেন, কখনো নদী পার হয়েছেন, কখনো জলাশয় আর দুর্গম জঙ্গলের মধ্যে চলতে হয়েছে। কিন্তু একটি বারের জন্য মাকে কাঁধ থেকে নামাননি। এই কাজে সহায়তা করেছেন আমান উল্লাহর ছেলে এনায়েত উল্লাহ। এনায়েত উল্লাহ বলেন, বাবা যখন কান্ত হয়ে পড়েছেন তখন তিনি দাদীকে কাঁধে তুলেছেন।
মংডুর রাজার বিলের মফিজুর রহমান। ৮০ বছরের বৃদ্ধা দাদীকে কাঁধে করে নিয়ে এসেছেন টেকনাফে। তিনি বলেন, দাদীকে ওই দুরাবস্থার মধ্যে তারা ফেলে আসতে পারেন না। দাদীকে বর্মি বাহিনী মেরে ফেলত। সেই ভয়ে তাকে কাঁধে বহন করে ১২ দিন হেঁটে টেকনাফে পৌঁছেছেন।
রাজার বিল হাইন্ডা পাড়ার নুর হোসেন। মা সখিনা বেগমকে কাঁধে করে ১০ দিন হেঁটে টেকনাফের শাহপরী দ্বীপে পৌঁছেছেন। এভাবে অংসখ্য রোহিঙ্গাকে দেখা যায় মা-বাবাকে কাঁধে করে নিয়ে এসেছেন নিরাপদ আশ্রয়ে।
নুর হোসেন বলেন, মাকে কাঁধে নিয়ে এই ১০ দিন হাঁটতে কখনো কান্ত হননি। মনে হয়নি তিনি কাঁধে করে কিছু বহন করছেন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাবা-মায়ের প্রতি এই দরদ দেখে অনেকেই চোখের পানি ফেলেন। আবার অনেক রোহিঙ্গা বয়স্ককে প্রতিবেশীরা কাঁধে করে টেকনাফে নিয়ে এসেছেন। মন্ডুর খিলাইদম এলাকার মাহমুদুল হাসানের বয়স ৮০ বছর। বয়সের ভারে যেমন ন্যুব্জ, তেমনি রোগাক্রান্ত। স্ত্রী মাসুমা খাতুনও বয়স্ক। প্রতিবেশীরা এই বৃদ্ধাকে একটি চেয়ারে বসিয়ে বাঁশের হাতল লাগিয়ে নিয়ে এসেছেন টেকনাফে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস