শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১১:১৭:৩৫

৩০টি নলকূপের পানি খেয়ে বেঁচে আছেন ৪ লাখ রোহিঙ্গা!

৩০টি নলকূপের পানি খেয়ে বেঁচে আছেন ৪ লাখ রোহিঙ্গা!

নিউজ ডেস্ক : রাখাইনে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকদের পানি খাওয়ার একমাত্র ভরসা ৩০টি নলকূপ। এছাড়া তাদের স্যানিটেশনের জন্য রয়েছে ১৮০০ টয়লেট।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলো ঘুরে জানা গেছে এই তথ্য।

কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বালুখালী ঢাল পাহাড় পর্যন্ত ছোট বড় ১৭টি পাহাড়ে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া পালংখালী,থ্যাংখালী ও টেকনাফের উনছিপ্রাং-এর বিভিন্ন পাহাড়েও আশ্রয় নিয়েছে তারা। তাদের সবাইকে এখনও স্যানিটেশনের আওতায় আনা যায়নি। ফলে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।

এদিকে নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। কবে নাগাদ রোহিঙ্গা আসা বন্ধ হবে তাও বোঝা যাচ্ছে না। এসব সংকট ছাড়াও রয়েছে বাসস্থানের সমস্যা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত এসব এলাকায় ১৮০০ টয়লেট এবং ৩০টির মতো নলকূপ বসানো হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গারা বিভিন্ন পাহাড় ও টিলায় ছড়িয়ে পড়ায় তাদের সবাইকে এই ব্যবস্থার মধ্যে আনা যাচ্ছে না।

বালুখালী, কুতুপালং ও উনছিপ্রাং এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,পাহাড়ে রোহিঙ্গারা নিজেদের মতো ঘর বানিয়ে থাকছে। যে জায়গায় খাচ্ছে, থাকছে তার আশেপাশেই মলমূত্র ত্যাগ করছে। চারদিকে মশা,মাছি উড়ছে। অনেকে আবার পলিথিনের বেড়া দিয়ে টয়লেট তৈরি করেছে খোলা জায়গায়।

এদিকে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীরা একই পোশাকে আট-দশদিন থাকছেন। গায়েই তাদের কাপড় ভিজছে, আবার শুকাচ্ছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।

প্রসঙ্গত, রাখাইন থেকে হত্যা-নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনীর নিপীড়নকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাট্রিক মারফি মিয়ানমার সফর করে রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগের কথা জানান। এ সময় তিনি সঙ্ঘাতপ্রবণ এলাকায় ত্রাণকর্মীদের অবাধে প্রবেশের ব্যাপারে মিয়ানমারকে চাপ দেন। এদিকে গত বছর অং সান সুচি মিয়ানমারের জাতীয় নেত্রী হওয়ার পর রাখাইনে সহিংসতা এবং রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে চাপের মুখে রয়েছেন।

গত ২৫ আগস্ট ভোররাতে সংঘর্ষের পর রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সেনা অভিযান শুরু হওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে এরই মধ্যে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সেখানে সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতন-নিপীড়নের বর্ণনা দিচ্ছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলোও রাখাইনে মানবাধিকারের চরম সংকটের কথা বলেছে। সেখানে সেনাবাহিনী মূলত জাতিগত নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে বলে দাবি তাদের।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে