শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৪:৪৩:২৭

পারস্পরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা

পারস্পরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজার : বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য হাত পা ছড়িয়ে বেঁচে থাকার মতো অপ্রতুল স্থান আর জীবনের মৌলিক মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে মানবিক সহায়তা দানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর।

বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। ত্রাণকর্মীদেরকে উদ্ধৃত করে অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ বলছে, শিবিরগুলোতে একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা।  

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তাকে ‘শোচনীয়ভাবে অপর্যাপ্ত’ আখ্যা দিয়েছেন ত্রাণকর্মীরা। আরও বেশি করে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়েও সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে গত এক মাসেরও কম সময়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪ লাখ মানুষ; যা নজিরবিহীন। এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমাগত মিয়ানমার সংলগ্ন বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার জঙ্গলের আরও গভীরে বিস্তৃত হচ্ছে রোহিঙ্গা বসতি। প্রতিনিয়ত কর্দমাক্ত শরণার্থী শিবিরে আগমন ঘটছে নতুন নতুন মুখের।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য রেড ক্রসের মুখপাত্র কোরিন আম্বলার অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বিপন্নতার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সমস্ত পরিসর জুড়ে কেবলই মানুষের ভোগান্তি। সেখানে বিশুদ্ধ পানির অভাব, আমরা দেখেছি লোকজন অর্থ, খাবার-দাবার নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে যা অশোভন। সত্যিকার অর্থে এটি আকস্মিক বিপর্যয়।’

কোরিন আম্বলার মনে করেন সঠিক পদ্ধতিতে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘লোকজন ট্রাকের ওপর থেকে কাপড়, খাবার এবং নগদ অর্থ ফেলছে। আর এটি ত্রাণ বিতরণের সঠিক পন্থা নয়। শিশু, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ত্রাণের জন্য মরিয়া হয়ে থাকা লোকজন ত্রাণবাহী ট্রাকের পেছনে ছুটছে। যতটুকু ত্রাণ পাচ্ছে আঁকড়ে ধরছে।’

তবুও থামছে না রোহিঙ্গাদের ঢল। বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২০,০০০ রোহিঙ্গা পালিয়ে আসছে। আম্বলার বলেন, ‘এ যেন এক জনস্রোত যার কোনও শেষ নেই, আপনারা জানেন তাদের যাওয়ার কোনও জায়গা নেই, কিন্তু এখনও তারা আসছে। আপনারা সবসময় ভাবেন এতে পরিস্থিতির অবনতি হবে না।তবে এরইমধ্যে বাজে অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমরা দেখছি ট্রাকবোঝাই লোকজন আসছে।’

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র মারিক্সি মেরকাডো আক্ষেপ করে বলেন, এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে যে সহায়তা পাওয়া গেছে তা শোচনীয়ভাবে অপর্যাপ্ত। তিনি বলেন, ‘আর আরও অনেক সহায়তা প্রয়োজন। কেবল তহবিলের যোগান দেওয়াই নয়, ত্রাণ কার্যক্রম বিস্তৃত করতে বিতরণের সময় মাঠ পর্যায়ে সহায়তার প্রয়োজন। এ প্রয়োজন সীমাহীন বলে মনে হচ্ছে এবং ভোগান্তি গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে।’

ত্রাণের অপেক্ষায় মরিয়া হয়ে থাকা মানুষকে সহায়তা না দেওয়া হলে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন মেরকাডো। তিনি বলেন, ‘শরণার্থী শিবির এবং অনানুষ্ঠানিক রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে উত্তেজনা বাড়ছে।’ মেরকাডো জানান, শরণার্থীদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু যাদের টিকে থাকার জন্য মৌলিক সুরক্ষা প্রয়োজন।

গত সপ্তাহে এবিসি নিউজের সংবাদকর্মীরা কুতুপালং শিবির পরিদর্শন করতে যান। সেসময় দুই দিনের এক নবজাতককে কোলে নিয়ে থাকা এক শরণার্থীর সঙ্গে দেখা হয় তাদের। সেই মা জানান, মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে আসার সময় কারও সহযোগিতা ছাড়াই জঙ্গলে ওই কন্যা শিশুর জন্ম দিয়েছেন তিনি। মেরকেডো বলেন, ওই শিশুটির মতো এমন ৩৬ হাজার শিশু জীবনঝুঁকিতে রয়েছে। তারা এমন এক পরিবেশে আছে যেখানে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জরুরিভাবে তহবিল সংগ্রহের জন্য অস্ট্রেলিয়ান রেডক্রস বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছে। সহায়তার আবেদন জানিয়েছে আরেক দাতব্য সংস্থা অক্সফামও। তারাও চায়, সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে বিভিন্ন দেশের সরকার হাত বাড়িয়ে দিক এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় শামিল হোক।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে