নিউজ ডেস্ক : ‘অং সান সুচিকে মনে করতাম রোহিঙ্গাদের আশা-ভরসা। মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে গৃহবন্দিত্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন নির্যাতন ভোগ করেছেন তিনি। মিলিটারিশাসিত মিয়ানমারে সুচিকে মনে করা হতো বার্মায় বসবাসরত সব নাগরিকের ঐক্যের প্রতীক। কিন্তু সুচি ক্ষমতায় এলে ঘটল এর উল্টো। সেনাশাসিত সময়ে রাখাইন রাজ্যে যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, এর সমস্ত রেকর্ড ভাঙল সুচি বাহিনী। সন্ত্রাসী দমনের নামে সাধারণ রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সহায় সম্বলহীন করা হচ্ছে। সর্বোপরি দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। আরাকানে মূলত গণহত্যা চালানো হচ্ছে। ’
কথাগুলো বলেছেন রাখাইন রাজ্যের দক্ষিণ মংডু থানার ডংখালী গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান (স্থানীয় ভাষায় হুক্কাট্টা)
এমন অভিযোগের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন রাখাইনের বুচিডং টংবাজার গ্রামের নুর নাহার, মংডু বড়ছড়া গ্রামের জুনু, ফাতেমা, রাজার বিলের খালেদা ও গড়াখালীর রশিদাও।
কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং এলাকায় কথা হয় বাসেরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গ্রামে দোতলা বাড়ি ছিল। এমন সুন্দর বাড়ি ওখানে আর কারো ছিল না। জমিজমা ছিল, ছিল হালচাষ। সব কিছু ছেড়ে এখানে আসতে হল শুধু পরনের কাপড় নিয়ে। ’
‘যদি মিয়ানমারে ফিরে যাই ওরা আমাদের মেরে ফেলবে। ’-যোগ করেন দেশটির সাবেক এ জনপ্রতিনিধি। ভয় আর আতঙ্ক তাঁকে তাড়া করছে এখনো। এলাকার মুরব্বি হিসেবে সরকারিভাবে গঠিত কমিটিরও একজন তিনি। নিয়মিত যোগাযোগ থাকত স্থানীয় মংডু প্রশাসনের সাথে। বলেন, ‘অথচ ওরাই প্রথমে এসে আমার সুন্দর বাড়িটি পুড়িয়ে দিল। সব শেষ করে দিল। নিঃস্ব করে পথে বসিয়ে দিল। এক সময় এলাকার অনেক অসহায় লোকজনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতাম। এখন সেই হাত অন্যজনের কাছে পাততে হচ্ছে। ভাগ্যের কী নির্মমতা!’
রাখাইনের টংবাজারের নুর নাহার বলেন, ‘মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। তবে ভিটেমাটি, ঘরবাড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে। আমাদের রাখাইনদের মতো রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে এসেছি ঘরবাড়ি হারিয়ে। আজীবন থাকার জন্য আসিনি। ’মিয়ানমার রাজারবিলের ফাতেমা বলেন, ‘স্বামী মোহাম্মদ শুক্কুর গুলিবিদ্ধ হয়েআহত হয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে। আমি কয়েকদিন পর একমাত্র ছেলে আলী নুরকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এসেছি। এখনো স্বামীকে দেখতে পাইনি। প্রাণ বাঁচাতে খাবার জোগাড় করতে রাস্তায় বসেছি।’
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস