কক্সবাজার থেকে : কক্সবাজারের এক কৃষকের কাছে চিঠি লিখেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির পাঠানো চিঠি হাতে পেয়ে কেঁদে ফেললেন ওই কৃষক। কাঁদতে কাঁদতে পড়লেন রাষ্ট্রপতির লেখা ওই চিঠি। ওই কৃষকের নাম রহিমুল্লাহ। তিনি কক্সবাজারের বাসিন্দা।
কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কয়েক দিন আগে কক্সবাজারে এক অনুষ্ঠানে সবার সামনে কৃষককে লেখা রাষ্ট্রপতির ওই চিঠি পড়ে শোনান তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। রাষ্ট্রপতির লেখা চিঠিটি কৃষক রহিমুল্লাহকে হস্তান্তর করার জন্য ডাকা হলে কাঁদতে কাঁদতে মঞ্চে আসেন তিনি।
জানা যায়, গত বছর নিজের ক্ষেতে চাষকৃত কুল চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য পাঠান কৃষক রহিমুল্লাহ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি শাইখ সিরাজের হাতে রহিমুল্লাহকে লেখা একটি চিঠি দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষক রহিমুল্লাহর ইচ্ছা ছিল, তার ক্ষেতে চাষকৃত কুল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে খাওয়াবেন। সেই ইচ্ছা পূরণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য কুল পাঠিয়েছেন রহিমুল্লাহ। তার পাঠানো সেই কুল পৌঁছে যায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে। একজন কৃষকের পাঠানো কুল খেয়ে রাষ্ট্রপতি তাকে চিঠি লিখেছেন। এ এক অনন্য বিষয়। এ চিঠি রহিমুল্লাহর জন্য নয়, বাংলাদেশের সব কৃষকের জন্য অনুপ্রেরণার বিষয়।
কয়েক দিন আগে কক্সবাজারে আয়োজিত ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে কৃষককে লেখা রাষ্ট্রপতির সেই চিঠি। পরে চিঠিটি উপস্থিত সব কৃষককে পড়ে শোনান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
চিঠিতে রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, “প্রিয় রহিমুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম। শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে আপনার বাগানের বাউকুল প্রেরণের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আপনি একজন কর্মবীর মানুষ। চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজের উপস্থাপনায় ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠান আপনাকে বাউকুল চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে জেনে আমি খুশি হয়েছি। প্রায় শূন্য থেকে শুরু করে আপনি আজ বিশাল বাউকুল বাগানের মালিক হয়েছেন, অর্থনৈতিকভাবে হয়েছেন স্বাবলম্বী।
আমার বিশ্বাস আপনার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষ কৃষিপণ্য, ফল ও ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন এবং নিজেদের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। শাইখ সিরাজের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান ইতোমধ্যে দেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে এবং কৃষি উৎপাদনে ইতিবাচক অবদান রাখছে। আমি আশা করি বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে তিনি ভবিষ্যতেও তার উদ্ভাবনীমূলক উদ্যোগ অব্যাহত রাখবেন।”
চিঠিতে রাষ্ট্রপতি আরও লিখেছেন, “আমি নিজেও একজন কৃষকের সন্তান। তাই কৃষকের দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা ঠিকই অনুভব করতে পারি। বর্তমান সরকার প্রতিটি ‘গ্রামকে শহরে পরিণত করার’ যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, আমার বিশ্বাস শিগগিরই আপনারা তার সুফল পাবেন।
গ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের সামগ্রিক জীবনযাত্রায় এ কর্মসূচি নতুন মাত্রা যোগ করবে। আমি আপনার ও আপনার পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও অব্যাহত সাফল্য কামনা করছি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক- মো. আবদুল হামিদ।”
রহিমুল্লাহকে লেখা রাষ্ট্রপতির এ চিঠি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাজার হাজার কৃষককে অনুপ্রাণিত করে। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠানে আবেগ, উচ্ছ্বাস আর আনন্দের অন্যরকম এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আবেগাপ্লুত হয়ে কান্না শুরু করেন কৃষক রহিমুল্লাহ। তার আনন্দের কান্না ছড়িয়ে পড়ে সব কৃষকের চোখে। রাষ্ট্রপতির লেখা চিঠিটি রহিমুল্লাহকে হস্তান্তর করার জন্য মঞ্চে ডাকা হয়। কাঁদতে কাঁদতে মঞ্চে এগিয়ে আসেন রহিমুল্লাহ। এ সময় রহিমুল্লাহকে বুকে জড়িয়ে নেন জুনাইদ আহমেদ পলক। পরে রাষ্ট্রপতির লেখা চিঠিটি রহিমুল্লাহর হাতে হস্তান্তর করা হয়।