কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামুতে ‘দ্বিতীয়বারও কন্যাসন্তান জন্ম নেয়ায়’ এবং ‘যৌতুকের দাবি’ পূরণ না হওয়ায় স্ত্রী-শ্বশুর-শাশুড়িকে ঘরবন্দি করে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে জামাইয়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
গত রোববার (২৮ মার্চ) দুপুরে রামুর ধোয়াপালং নয়াপাড়ায় দ্বিতীয়বারও কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ায় রাশেদাসহ তার বাবা-মাকে মারধর করে স্বামী আবু তাহের। এতে তার (রাশেদার) নবজাতক সন্তানও আহত হয়। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ বলছে, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এ ধরণের ঘটনায় পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে আপাতত বিষয়টি সামাজিকভাবে মিমাংসা করা যায় কিনা উভয়পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাদী মামলা করতে রাজী থাকলে নথিবদ্ধ করা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
নির্যাতন চলানোর অভিযোগ উঠা আবু তাহের (২৮) রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ধোয়াপালং নয়াপাড়ার বাসিন্দা জাফর আলমের ছেলে।
এ ঘটনায় জাফর আলমের বাবার বিরুদ্ধেও পুত্রবধূকে নির্যাতনে উস্কানি ও ইন্ধনদাতা হিসেবে অভিযোগ আনা হয়েছে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ রাশেদা বেগমের বাবা গিয়াস উদ্দিন টেকনাফ পৌরসভার অলিয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা। গত ৫ বছর আগে তার সঙ্গে আবু তাহেরের মধ্যে সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি মতে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে সাড়ে ৩ বছর বয়সী ও নবজাতকসহ দুই কন্যাসন্তান রয়েছে।
প্রথম কন্যাসন্তান জন্মের ২/৩ বছর পর থেকে স্বামী আবু তাহের যৌতুক হিসেবে বাবার বাড়ি থেকে ১ লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য স্ত্রী রাশেদা বেগম চাপ দিয়ে আসছিল। এ নিয়ে স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতনও চালায় সে (আবু তাহের)। এরইমধ্যে গত ১৯ মার্চ তাদের সংসারে আরও এক কন্যাসন্তান জন্ম নেয়।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ রাশেদা বেগম বলেন, আবু তাহেরের সঙ্গে পাঁচ বছর আগে তার বিয়ে হয়। বিয়ের দেড় বছর পর তাদের সংসারে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু বিয়ের ৩/৪ বছর পর থেকে তার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে এক লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য আবু তাহের চাপ দিচ্ছিল। বাবার আর্থিক অবস্থা জানিয়ে যৌতুক দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্বামী আবু তাহের বিভিন্ন সময় আমার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এরইমধ্যে আমার ঔরশে দ্বিতীয়বারও কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ার অভিযোগে তার (আবু তাহের) নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে খবর শুনে আমার বাবা-মা স্বামীর বাড়িতে এলে তাদেরও মারধর করা হয়। এতে আমার নবজাতক সন্তানও নাক ও নাভীতে আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হয়েছে।’
রাশেদা বলেন, ‘দ্বিতীয়বারও কন্যাসন্তান জন্ম নেয়ার জন্য স্বামী ও শ্বশুর আমাকে দোষী হিসেবে দায়ী করেছে। শ্বশুরের ইন্ধনে ও উস্কানিতে স্বামী আমার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।’
রাশেদার বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, যৌতুকের দাবিতে তার মেয়ের ওপর আবু তাহের দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। কিছুদিন আগে দ্বিতীয়বারও কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ায় তার মেয়ের ওপর জামাই নির্যাতন শুরু করে। খবর পেয়ে তার (গিয়াস) স্ত্রী মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যান।
‘এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মা-মেয়েকে (রাশেদা ও তার মা) চড়-থাপ্পড় দিয়ে মারধর করে। খবর পেয়ে আমিও গত ২৮ মার্চ মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যাই। এসময় আমাদেরকে দ্বিতীয়বারও মারধর করে ঘরের একটি কক্ষে আটকে রাখে মেয়ের স্বামী (আবু তাহের)। পরে আমাদের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে’, বলেন ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা।
তবে মুঠোফোনে আবু তাহেরের সঙ্গে কথা হলে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন।
আবু তাহের বলেন, যৌতুকের দাবি এবং কন্যাসন্তান জন্ম নেয়ার অভিযোগে স্ত্রীসহ শ্বশুর-শাশুড়িকে মারধর করার অভিযোগ সত্য নয়। তার স্ত্রী এখনও বাপের বাড়ি টেকনাফের ভোটার।
‘গত কয়েকদিন আগে সেখানে (টেকনাফে) জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্টকার্ড বিতরণ উপলক্ষে বাপের বাড়ি যেতে না দেয়ায় স্ত্রীসহ শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে তার মতবিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে আমার বাবার সঙ্গে শ্বশুর-শাশুড়ির মধ্যে বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটে।’
এখন ওই ঘটনাকে ভিন্নভাবে অভিযোগ তোলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাশেদা বেগম জানান, এ ঘটনায় গত সোমবার (২৯ মার্চ) তিনি বাদী হয়ে স্বামী ও তার শ্বশুরকে আসামি করে রামু থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ঘটনার ব্যাপারে রামু থানার ওসি মোহাম্মদ আজমিরুজ্জামান বলেন, ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। ঘটনাটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ নিয়ে।
‘এ ধরণের ঘটনার আগের অভিজ্ঞতা থেকে উভয়পক্ষকে (বাদী-বিবাদী) বিরোধীয় বিষয়ে সামাজিকভাবে মিমাংসা করা যায় কিনা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার জন্য আপাতত পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’
‘কারণ দেখা গেল যে, মামলা নথিভূক্ত করা হয়েছে ঠিকই; পরে আবার উভয়পক্ষ নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে যায়। এ ধরণের ঘটনার অভিজ্ঞতাও ইতিপূর্বে হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন ওসি।