কক্সবাজার: যে লবণের দাম চাষীরা পাচ্ছেন মণপ্রতি মাত্র ১৩০ টাকা, সেখানে প্যাকেটজাত করার পর সেই লবণ বিক্রি করা হচ্ছে মণপ্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। প্রান্তিক চাষী আর ভোক্তাদের মাঝে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে যে, কেনা আর বিক্রির মধ্যে এত ফাঁরাক!
এমন প্রশ্ন তুলেছে কক্সবাজার লবণ চাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ। বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা।
পরে বিকালে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে প্রান্তিক লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীদের বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্মারকলিপি ও সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে দাবি তোলা হয়েছে- অপ্রয়োজনীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণ আমদানি বন্ধ করে দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় কক্সবাজার জেলার ৫৫ হাজার লবণ চাষী অনাহারে মারা যাবে। পাশাপাশি ঋণের বোঝা টানতে না পেরে বসতবাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আজ অত্যন্ত দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমরা লবণ চাষী ও লবণ ব্যবসায়ীরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচাতে আপনাদের লেখনির মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইতে এসেছি।
তিনি বলেন, কক্সবাজার ও বাঁশখালীর কিছু অংশ নিয়ে প্রায় ৫৭,২৭০ একর জমিতে প্রায় ৫৫ হাজার লবণ চাষী রয়েছেন। এছাড়াও লবণের ওপর বিভিন্ন ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন আরও ৮০ শতাংশ মানুষ। ফলে দেশীয় লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে গেলে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন, যাদের অন্য কোনো পেশা নেই।
তার মতে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর লবণ শিল্প রক্ষার লক্ষ্যে একটি লবণনীতি প্রণয়ন করে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যার ফলে লবণ অধ্যুষিত এলাকার চাষী ও ব্যবসায়ীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু ‘লবণ সিন্ডিকেট’ বারবার বিদেশি লবণের ওপর দেশকে নির্ভরশীল করে দেশে তৈরি লবণকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছিল।
তখন ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে অপ্রয়োজনে এক মুঠো লবণও আমদানি করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণার পর দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর লবণের মূল্য স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে লবণ আমদানির হিড়িক পড়ায় কক্সবাজারের চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
বিসিক সূত্রমতে, ২০২০ সালেই ৩ লাখ ৪৮ মেট্রিক টন দেশীয় লবণ মাঠে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণের ওপর ৩৪% (শতাংশ) শুল্ক আরোপ করা হয়। সেই ৩৪% (শতাংশ) শুল্ক আদায় করে প্যাকেটজাত করতে খরচ পড়ে প্রতি কেজিতে ১৪ টাকা।
কিন্তু দেশীয় লবণ ঘাটতিসহ প্যাকেটজাত করতে প্রতি কেজি লবণে খরচ পড়ে ১৮ টাকা; যার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশীয় লবণের চেয়ে অস্বাস্থ্যকর ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণ বাজারজাত করে একদিকে মানুষের স্বাস্থ্যহানি করছে, অপরদিকে দেশীয় লবণ শিল্প ধ্বংস করে পুরো দেশকে বিদেশি লবণের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলছে।