আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য, সারি সারি লাশ রাখা আছে উঠানে। পাশে বসে কাঁদছেন মা। পাঁচ ছেলে অনুপম শীল, নিরুপম শীল, দীপক শীল, চম্পক শীল ও স্মরণ শীলের লাশ। কিছুক্ষণ পর পর তাদের জড়িয়ে ধরছেন মা মিনু রাণী। ক্ষণে ক্ষণেই আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ডুকরে কাঁদছেন সেই হতভাগী মা।
কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ মালুমঘাট এলাকার মৃত সুরেশ শীলের বাড়িতে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। স্বামী ও পাঁচ সন্তানকে হারিয়ে ষাটোর্ধ মিনু রাণীকে দেখলে যে কারো চোখে অঝোরে পানি ঝরবে। সব হারিয়ে মিনু রাণী অনেকটা পাগল। তার আর্তনাদ থামাতে পারছেন না কেউ। ছেলেদের লাশ দেখে মা মিনু রানী শীল আর্তনাদ করে বলছিলেন, যাদের মানুষ করেছি, তাদের নিয়ে গেছে। কাদের জন্য বাঁচব।
কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ মালুমঘাট এলাকার সুরেশ শীলের বাড়িতে বিরাজ করছে কল্পানাহীন পরিবেশ। স্বজন কিংবা আপনজন হারানোর কী বেদনা তা ওই বাড়িতে যারা গিয়েছে তাদের বুঝতে কষ্ট হবে না।
স্বামী ও পাঁচ সন্তানকে হারিয়ে ষাটোর্ধ মিনু রাণীকে দেখলে যে কারো চোখে অঝোরে পানি ঝরবে। সব হারিয়ে মিনু রাণী অনেকটা পাগল। তার আর্তনাদ থামাতে পারছেন না কেউ।
সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ১০ দিন আগে মিনু রানীর স্বামী সুরেশ শীলের মৃত্যু হয়। জীবন সঙ্গীকে হারিয়ে বৃদ্ধ বয়সে ছেলে-মেয়ে, নাতি নাতনি ও আপনজনদের নিয়ে কোনোরকমে দিন কাটাচ্ছিলেন মিনু রাণী। স্বামীর মৃত্যুর কারণে সব আপনজনও প্রায় পাশে ছিল।
কিন্তু মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ার ডুলাহাজারা মালুমঘাট খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালসংলগ্ন হাসিনাপাড়ায় মিনুর স্বাভাবিক চলার গতিপথকে স্তব্ধ করে দেয় দ্রুতগামী একটি ঘাতক ডাম্পার (মিনি ট্রাক)।
স্থানীয় সংবাদকর্মী এম আর মাহাবুব বলেন, ১০ দিন আগে মিনু রাণীর স্বামী সুরেশ শীল পরলোকগমন করেন। যে কারণে তাদের পরিবার পরিজনদের মঙ্গলবার ছিল শুদ্ধিস্নান। আর পরেরদিন হওয়ার কথা ছিল ক্রিয়ানুষ্ঠান। কিন্তু শুদ্ধিস্নানের দিনেই শ্মশান থেকে ফেরার পথে ঘাতক পিকআপ (ডাম্পার) কেড়ে নেয় মিনু রাণীর পাঁচ সন্তানের প্রাণ। সঙ্গে ছিল আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তারাও আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
তিনি আরও জানান, পাঁচ সন্তানকে একসঙ্গে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় সুরেশ শীলের স্ত্রী ৬০ বছরের বয়সী মিনু রাণী শীল। তার বুকফাটা আর্তনাদ দেখে গ্রামের মানুষেরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। কাঁদছেন সবাই।
তাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না উপস্থিত লোকজন। কারণ একটা বলে সন্তানা দিলে আরেকটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় মিনু রাণী। উঠানে পাঁচ লাশের পাশে তাদের স্ত্রীরা বিলাপ করছেন। ডুকরে কাঁদছে তাদের ছেলে-মেয়েরাও। প্রতিবেশীরা তাদের সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি ছিলেন মুসলিমরাও। পাঁচ ভাইয়ের এমন করুণ মৃত্যুতে হতবিহবল সবাই।
ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। পাঁচ ভাইয়ের সৎকারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কেঁদেছে।