নুরুল আমিন, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) থেকে : আহত শিশু রীপার মুখে পানিও দেয়নি ঘাতক মা মিলন বেগম। ‘আম্মা গো, পানি দাও, আমারে গোছল করাও’ বলে কাঁদছিল আহত রীপা। তার এ কান্নায় মন গলাতে পারেনি ঘাতক মায়ের। অপরদিকে ৭ মাসের শিশু নিপা পড়েছিল নিথর দেহে। তার বুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করে বাবা লিটন মিয়া।
এসবে কান না দিয়ে মিলন সেই খবরটি জানাতে দৌড়ে চলে যায় পাশের বাড়ির মীর মর্তুজ মিয়ার বাড়িতে। মর্তুজা সঙ্গে সঙ্গে মহিলাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে এবং বিষয়টি গ্রামবাসীকে সকালে জানানোর পরামর্শ দিয়ে আবার ফিরে যায় বাড়িতে। পরদিন সকালে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে মিলন। গ্রামবাসী জড়ো হলে ‘আমার শিশুকে রফিক, সোহেলরা খুন করেছে’ বলে বিলাপ করতে থাকে। তাকে শারীরিক ভাবে সন্মানহানী করা হয়েছে বলে প্রচার চালায় মিলন।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মিলন আরো জানায়, স্বামী লিটনের সঙ্গে ৩ কন্যা সন্তান নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো তার। বোনের বিয়ে (লিটনের শালী) নিয়ে ঝগড়া হয়েছে স্বামীর সঙ্গে কয়েকবার। কারণে অকারণে মারধর করতো স্ত্রীকে লিটন। লিটন খুবই বদ মেজাজি। সে বাড়িতে খুব একটা থাকে না। সামান্য জিনিস নিয়ে লিটন ঝগড়া বাধিয়ে দেয় যার-তার সঙ্গে। মানুষের দিকে তেড়ে যায়। মাছ ধরা নিয়ে পাশের বাড়ির রফিক মিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল সেদিন (১৯শে আগস্ট)। এর পর থেকে রফিক মিয়াদের ফাঁসানোর ধান্ধায় পাগল হয়ে যায় লিটন।
মিলন জানায়, ঘটনার ২ দিন আগে ২ অবুঝ শিশুকে হত্যা করে রফিকদের ফাসানোর পরিকল্পনা করে লিটন। সে মোতাবেক রোববার গভীর রাতে ৭ মাসের কন্যা নিপা ও ৩ বছরের রিপার উপর দা চালায় স্বামী লিটন। এ ঘটনায় নিপা ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। নাড়ীভুঁড়ি বের হয়ে যাওয়া মারাত্মক আহত রিপার চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে পুলিশি পাহারায়। এ ঘটনায় দারোগা আতাউর রহমান বাদী হয়ে বাবা লিটন মিয়া, মা মিলন ও শাশুড়ি খুজেদা খাতুন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। রোববার গভীর রাতে সীমান্তের গাজীপুর ইউনিয়নের মাইজগাঁও (জারুলিয়া) গ্রামের লিটন মিয়া ও স্ত্রী মিলন বেগম ৭ মাসের নিজ কন্যা সন্তান নিপাকে কুপিয়ে হত্যা করে।
স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এসে বুকে হাতে মারাত্মক আহত সাড়ে ৩ বছরের রিপাকে তাৎক্ষণিক হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। খবর পেয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র হাসপাতালে গিয়ে আহত শিশুর জবানবন্দি নেন এবং তা’কে পুলিশ পাহারায় সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেন।
সোমবার সকালে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, চুনারুঘাট থানার ওসি নির্মলেন্দু চক্রবর্তী ও ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ সুপার জানান, আহত রিপা এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সুস্পষ্ট জবানবন্দি দিয়েছে। তার বোনকে মা-বাবা খুন করেছে বলে জানিয়েছে সে।
এলাকাবাসী জানান, পাশের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে মাছ মারা নিয়ে লিটনের বিরোধ চলে আসছিল। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেই শিশু কন্যাকে হত্যা করেছে লিটন। পুলিশ নিহত শিশু নিপা’র মা মিলন প্রতিবেশী মীর মর্তুজ আলী ও লিটনের শাশুড়ি খুদেজা খাতুন (৪০)কে আটক করে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ঘাতক লিটন পলাতক। মঙ্গলবার তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করার কথা রয়েছে এমজমিন
২৪ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস