হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের বাহুবলে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা হলো না প্রবাসী নাছির উদ্দিনের। দুবাই থেকে দেশে ফিরে বাড়ি যাওয়ার পথে বাসচাপায় নিহত হন তিনি।
সিলেট বিমানবন্দর থেকে তাকে আনতে গিয়ে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় আহত হন তার ভাইসহ আরও পাঁচজন। আহতদের মধ্যে আব্দুল্লাহ (৪০) নামের এক যাত্রী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নিহতরা হলেন- উপজেলার চন্দনিয়া গ্রামের নছর উদ্দিনের ছেলে দুবাই প্রবাসী নাছির উদ্দিন (৪০) ও উপজেলার হরিতলা গ্রামের মুনছব উল্লাহর ছেলে আব্দুল্লাহ (৪০)।
আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাহুবল মডেল থানা পুলিশের ওসি মো. মাসুক আলী। তিনি বলেন, বুধবার মধ্যরাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাহুবল উপজেলা সদরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার চন্দনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নাছির উদ্দিন গত ১২ বছর ধরে দুবাইয়ে কর্মরত। তিন সন্তানের জনক নাছির উদ্দিন প্রতি ২-৩ বছর পরপর ছুটিতে দেশে আসেন।
এবার ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দুবাইস্থ নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ছুটিও পান। দিনক্ষণ ঠিক হয় দেশে ফেরার। খবরটি তার পরিবারে পৌঁছলে ঈদের আনন্দে নতুনমাত্রা যোগ হয়।
পরিবারিকভাবে কোরবানির গরু কেনার প্রস্তুতির পাশাপাশি স্বজনকে পাশে পেতে পরিবারের সদস্যদের দিন গণনা শুরু হয়। বুধবার দুবাই থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে একটি ফ্লাইটে রওনা দেন তিনি।
আনন্দে উদ্বেলিত পরিবারের সদস্যরা তার জন্য নানা রকম মুখরোচক খাবার-দাবার রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তার সহোদর ইছার উদ্দিনসহ কয়েকজন তাকে রিসিভ করতে সিলেট বিমানবন্দরে ছুটে যান।
রাতে নাছির উদ্দিন সিলেট বিমানবন্দরে নামার পর স্বজনরা তাকে রিসিভ করেন। সিলেট থেকে তারা যাত্রীবাহী বাসে রওনা হন। রাত পৌনে ১২টায় বাহুবল উপজেলা সদরের মৌচাক পয়েন্টে নেমে একটি সিএনজিযোগে বাড়ির পথে রওনা হন তারা। মোহনা কমিউনিটি সেন্টারের কাছে পৌঁছামাত্র পেছন থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস তাদের সিএনজিকে চাপা দেয়।
এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস ও সিএনজি খাদে পড়ে গেলে প্রবাসী নাছির উদ্দিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন নাছির উদ্দিনের ভাই ইছার উদ্দিনসহ পাঁচজন। আহতদের তাৎক্ষণিক বাহুবল ও পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, প্রবাসী নাছির উদ্দিনকে কাছে পাওয়ার জন্য উদগ্রীব পরিবারের সদস্যদের কাছে ১০ মিনিটের মধ্যে মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছে যায়। আনন্দে আত্মহারা পরিবারটিতে নেমে আসে রাজ্যের শোক। রাতের নিরবতা ভেঙে শুরু হয় স্বজন হারানোর আর্তনাদ। কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে এলাকার আকাশ-বাতাস।
বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত আব্দুল্লাহ মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে তাদের মরদেহ বৃহস্পতিবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। চালক পালিয়ে গেলেও বাসটি আটক করেছে পুলিশ।