হবিগঞ্জ: পরকীয়া প্রেমের টানে তিন শিশু সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করে পাষণ্ড মা। ভাগ্যক্রমে ২ সন্তান বেঁচে গেলেও মৃত্যুর কাছে হার মানে ছোট মেয়ে সাথী আক্তার (৬)। ঘটনার এক বছর পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে মূল রহস্য। এ ব্যাপারে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন মা ফাহিমা আক্তার।
মঙ্গলবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় ফাহিমার জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাসুক আলী।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার চারিনাও গ্রামের ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালক সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ফাহিমা খাতুন। প্রায় ১৫ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। স্বামীর অভাব অনটনের কারণে জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুরে প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি নেয় সে। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে পাশের বাড়ির বিত্তশালী আক্তার হোসেনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ফাহিমার। সম্পর্কের পর আক্তার ফাহিমাকে মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন ধরণের উপহার সামগ্রী দেন এবং সিরাজুলকে ত্যাগ করে তাকে বিয়ের জন্য বলেন। কিন্তু তিন সন্তানকে রেখে ফাহিমা দ্বিতীয় বিয়েতে সম্মত হচ্ছিলেন না।
একদিন সিরাজুলকে ডিভোর্স দেয়ার উদ্দেশ্যে আক্তারকে নিয়ে আদালতেও যায় ফাহিমা। কিন্তু তিন সন্তানের কথা মনে হলে সেখান থেকে ফিরে আসে। তাদের এ অবৈধ সম্পর্ককে বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে তারা বুঝতে পারে ‘পথের কাটা’ ফামিহার ৩ শিশু সন্তান। তাই আক্তার ও ফাহিমা মিলে ৩ সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর পরকীয়া প্রেমিক আক্তার বিষ কিনে ফাহিমাকে দেয়। পরের দিন ১৮ অক্টোবর দুপুরে ফাহিমা জুসের সাথে বিষ মিশিয়ে তিন শিশু সন্তানকে খাইয়ে দেয়। বিষক্রিয়া তারা ছটফট করতে থাকলে ওই দিন সন্ধ্যায় তাদেরকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে এলে ছোট সন্তান সাথী আক্তার (৬) মারা যায়।
অপর দুই শিশু সন্তান তোফাজ্জল ইসলাম (১০) ও রবিউল ইসলামকে (৭) দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে সৌভাগ্যক্রমে তারা বেঁচে যায়। সাথী আক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় বাবা সিরাজুল ইসলাম বাদি হয়ে গত ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এর কিছুদিন পর সন্দেহবশত মা ফাহিমাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু ভিসেরা রিপোর্ট না আসার ফলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে না পারায় এগোতে পারছিল না পুলিশ। এদিকে আক্তার হোসেন ও ফাহিমার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কটি এলাকায় প্রকাশ হতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়।
সম্প্রতি ময়না তদন্ত রিপোর্টে পুলিশ জানতে পারে, বিষ প্রয়োগেই হত্যা করা হয়েছে সাথীকে। বেগবান হয় তাদের তদন্ত। একপর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, পরকীয়ার কারণে হত্যার উদ্দেশ্যে ৩ শিশুকে জুসের সাথে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল এবং এতেই শিশু সাথী আক্তারের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি পুলিশ মা ফাহিমাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড প্রার্থনা করে। সে প্রেক্ষিতে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে গত ২৮ নভেম্বর ফাহিমাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ১ ডিসেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
পুলিশ জানায়, প্রেমিক আক্তার হোসেনকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।