হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের বৃদ্ধ বাবাকে খুন করেছে ছেলে ও তার স্বজনরা। দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত তিনজনকে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাহ।
এর আগে, দুপুরে গ্রেফতারকৃত তিনজন হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পবন চন্দ্র বর্মনের আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, স্থানীয় বিজনা নদীর লিজ নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার বাঁশডর গ্রামের দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ১০-১২টি মামলাও রয়েছে। এর জের ধরে গত বছরের ১৫ জুলাই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ঘরে বিছানায় থাকা ৭৫ বছরের বৃদ্ধ জাহির আলীকে তার ছেলে আরশ আলী এবং তার গোষ্ঠীর লোকজন ফিকল দিয়ে পেটে আঘাত করে হত্যা করে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ ও ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে আরশ আলী বাদী হয় পরদিন প্রতিপক্ষের ৯২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো.আমিনুল ইসলামকে।
স্থানীয় সোর্স ও টেকনোলজি কাজে লাগিয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটন ও প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে থানা পুলিশ নিবিড় তদন্ত অব্যাহত রাখেন। তদন্তের স্বার্থে সিআইডি, ঢাকা হতে ডিএনএ টেস্ট রিপোর্টে ভিকটিমের খাটের নিচ থেকে উদ্ধারকৃত রক্তমাখা ফিকলের অগ্রভাগের রক্তের সাথে ভিকটিমের রক্তের মিল পাওয়া যায়। তদন্তকালে বাদী পক্ষের আচরণ কিছুটা সন্দেহজনক পরিলক্ষিত হয়।
তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে নিহত জাহির আলী দাঙ্গার সময় ঘটনাস্থলেই ছিল না। তিনি পান বিক্রির জন্য গ্রামের পশ্চিমহাটিতে গিয়েছিলেন। দাঙ্গা শেষ হওয়ার প্রায় আধাঘণ্টা পর তিনি তার ঘরে ফিরে খাটে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এসব তথ্য পেয়ে পুলিশের সন্দেহের তীর সন্দেহ বাদী পক্ষের দিকে ধাবিত হয়।
এ প্রেক্ষিতে গত ২২ এপ্রিল বাদীপক্ষের মিসবাহ উদ্দিনকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চালায় পুলিশ। এ সময় সে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় সে। তার দেয়া তথ্যমতে, গত ২৩ এপ্রিল বাদি পক্ষের সামছুল হক ও জিলু মিয়াকে আটক করা হয়।