হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে এক জিন্দা শাহ পীরের আবির্ভাব ঘটেছে। হাত-পা বেঁধে দুই ঘণ্টাব্যাপী পানিতে ভেসে মানুষকে তাক লাগিয়ে নিজের জাহির করলেন। পরিচয় দিয়েছেন জিতু মিয়া ওরফে জিন্দা শাহ।
রোববার দুপুরে কবরবাসে যান জিন্দা পীর। সেখানে থাকবেন তিনদিন। এটিকে তিনি কবর চিল্লা বলে দাবি করেছেন।
এসব দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছেন। তবে এ নিয়ে দর্শনার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
কেউ বলছেন, এটি কুসংস্কার, যাদু। আবার কেউ এটিকে পীরের কেরামতি বলছেন।
জানা গেছে, শহরতলীর নয়াপাথারিয়া গ্রামে পাঁচদিন আগে হঠাৎ হাজির হন অপরিচিত এক বৃদ্ধ। তার মুখভরা দাড়ি ও গোঁফ। এখানে এসে কয়েকজনকে ডেকে নেন তিনি।
এই বৃদ্ধ বলেন, আমি অনেক জায়গায় গিয়েছি, কোনো জায়গা পছন্দ হয়নি। গ্রামের শেষ প্রান্তে হাওরে প্রবেশের মুখেই একটি পুকুরপাড়ে লোকজনকে নিয়ে বলেন, জায়গাটি আমার পছন্দ হয়েছে। তোমরা জায়গা দিলে আমি কবরচিল্লা (কবরবাস) করতে চাই।
তার কথামতো জায়গা দিতে রাজি হন পুকুরের মালিক। সবকিছুই তার কথামতো করেন গ্রামের লোকজন। এ সময় তিনি তাদের বলেন, হাত-পা বেঁধে পুকুরের পানিতে ফেলে দিতে।
এরপর দুই ঘণ্টার জন্য তাকে পানিতে ফেলে দেয় গ্রামের কয়েকজন। পানি থেকে উঠে খাওয়া, ধুমপান সবই হচ্ছে নিয়মিত তার। মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন স্বাভাবিকভাবে।
পাঁচদিন এভাবে চলার পর রোববার কবরবাসের ঘোষণা দেন তিনি। তার ঘোষণা অনুযায়ী, পুকুরের পাড়ে একটি জায়গায় টিনের ছোট্ট ঘর বানিয়ে এর ভেতর কবর খুঁড়তে শুরু করেন গ্রামের কয়েকজন।
রোববার বেলা ১১টায় হাজারো মানুষের সামনে তিনি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ৪০ মিনিট পুকুরের পানিতে ভেসে থাকেন। আজ বেলা আড়াইটার দিকে তাকে কবরে ঢুকানো হয়। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে তার কবর থেকে উঠার কথা।
কবরে যাওয়ার সময় তিনি ৩০০ গ্রাম আঙ্গুর ও একটি খালি প্লাস্টিকের কৌটা সঙ্গে নিয়ে যান। এ সময় তার স্ত্রী জায়েদা খাতুন ও ছেলে শামীম সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ বৃদ্ধ গণমাধ্যমকে জানান, তার নাম জিন্দা শাহ। বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার তিমিরপুর গ্রামে। বয়স ৮৫ বছর। বিগত ৪৫ বছর ধরে এমন কবর চিল্লা চর্চা করছেন তিনি। এর আগে অসংখ্যবার তিনি বিভিন্ন জায়গায় পানিতে ভেসে কাটিয়েছেন, কবরবাস করেছেন।
কবরে থাকলে মারা যেতে পারেন গ্রামবাসীর এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার মৃত্যু হলে এজন্য কেউ দায়ী হবে না। আমার স্ত্রী-সন্তানরা আছে। তারাই এর দায় নেবে। কারো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
জিতু মিয়ার দাবি, গত ৪৫ বছর ধরে বিভিন্ন মাজারে ঘুরে আধ্যাত্মিক সাধনা করছেন তিনি। নিজেকে হবিগঞ্জ শহরের আরেক আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান মাহবুব রাজার ভক্ত দাবি করেন। তার আদেশেই তিনি কবর চিল্লায় যাচ্ছেন বলে জানান। এর আগেও তিনি ১১বার কবরে চিল্লা দিয়েছেন বলে জানান।
তার স্ত্রী জায়েদা খাতুন জানান, তার স্বামীর আসল নাম জিতু মিয়া। তাদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। স্বামীর খবর পেয়ে তিনি ছুটে এসেছেন। মাঝে মাঝেই তার স্বামী এমন কাণ্ড করে থাকেন। এমন ঘটনার সময় তিনি পাশে থাকেন।
তিনি বলেন, আমি সব সময়ই তা দেখে আসছি। আমার স্বামীর কিছু হলে এজন্য গ্রামবাসী দায়ী হবে না।
জমির মালিক জুয়েল মিয়া জানান, তিনদিনের জন্য কবরবাসে যেতে চাইলে তার জমি ব্যবহারের অনুমতি দেন। তবে বিষয়টি তিনি থানায় অবহিত করেছেন বলে জানান।
জিন্দা পীরের কথায় আতঙ্কিত হয়ে তার বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে এখানে নিয়ে এসেছি বলে জানান তিনি।
২৭ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিদিন/এমআর/এসএম