হবিগঞ্জ : জিন্দাবাবার কেরামতি দেখলেন সবাই। তার কেরামতি দেখে অবাক সবাই। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দুই ঘণ্টাব্যাপী পানিতে ভেসে থাকার কেরামতি দেখার পর আজ দেখলেন কবর থেকে উঠে আসার কেরামতি। তিনদিন কবরের ভেতর থাকার পর আজ মঙ্গলবার দুপুরে সবার সামনে কবর থেকে বেরিয়ে আসেন জিন্দাবাবা। মানুষকে তাক লাগিয়ে নিজেকে আরেকবার জাহির করলেন তিনি। এরপর আরেকটি ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এবার আগুন চিল্লা দেবেন বলে জানান জিন্দাবাবা।
এদিকে আজ কবর থেকে উঠে আসবেন জিন্দাবাবা এমন খবরে নয়াপাথারিয়া গ্রামে ভিড় জমে যায়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে জিতু মিয়াকে দেখতে। কবরে প্রবেশের আগে বিভিন্ন আধ্যাত্মিক কথাও শুনিয়েছেন তিনি। এ কারণে বিপুল মানুষ তার ভক্তও হয়েছে।
গত তিনদিন ধরে জিতু মিয়ার স্ত্রী-স্বজনসহ অন্যরা অপেক্ষা করেছেন উৎসুক মন নিয়ে। আজ মঙ্গলবার ছিল তৃতীয়দিন। সকাল থেকেই পুকুর পাড়ের সেই প্রাঙ্গণে ভিড় জমায় মানুষ।
দুপুর ২টার পর কবরের মাটি সরিয়ে চাটাই আর চাটাইয়ের নিচে দুই-তিনটা বাঁশ সরাতেই স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার দিয়ে ওঠেন, ‘জিন্দাবাবা বেঁচে আছেন।’ এরপর দুই ব্যক্তি গেরুয়া পাঞ্জাবি পরা সেই জিতু মিয়াকে ওপরে তুলে নিয়ে আসেন।
এসময় জিতু মিয়া পুকুরে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তার শরীর থেকে কাপড় খুলে নিতে সাহায্য করে ভক্তরা। এরপর তিনি পুকুরে নেমে যথারীতি ভেসে বেড়ান। ততক্ষণে পুকুরের চারদিক লোকে লোকারণ্য।
পুকুর থেকে ওঠার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জিতু মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমার ওপর নির্দেশ ছিল ১২ বার কবরে চিল্লা নেয়ার। আমি নিয়েছি। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জিন্দবাবা বলেন, ‘না।’ কবরে তিনদিন কিছু খাননি বলেও দাবি করেন।
জিতু মিয়া বলেন,‘আল্লাহর নাম নিলে আর কোনো কিছু খাওয়া লাগে না। কবরে গিয়ে দেখেন ওখানে প্রস্রাব, পায়খানাও নেই।’ সাধনায় মাটিতে থাকা যায়, পানিতে ভাসা যায়। আগুনেও থাকা যায়। সামনে যদি বেঁচে থাকি আগুনের চিল্লায় যাব।’ তিনি আগামী বছর আগুনের মধ্যে থাকবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
হবিগঞ্জে এক জিন্দা শাহ পীরের আবির্ভাব ঘটেছে এমন খবরে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় রোববার। কবরে যাওয়ার আগে হাত-পা বেঁধে দুই ঘণ্টাব্যাপী পানিতে ভেসে নিজের জাহির করেন জিন্দাবাবা। তার পরিচয় জিতু মিয়া ওরফে জিন্দা শাহ।
রোববার দুপুরে কবরবাসে যান জিন্দা পীর। সেখানে থাকেন তিনদিন। এটিকে তিনি কবর চিল্লা বলে দাবি করেছেন।
এসব দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো মানুষ জড়ো হন। তবে এ নিয়ে দর্শনার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। কেউ বলছেন, এটি কুসংস্কার, যাদু। আবার কেউ এটিকে পীরের কেরামতি বলছেন।
জানা গেছে, শহরতলীর নয়াপাথারিয়া গ্রামে পাঁচদিন আগে হঠাৎ হাজির হন অপরিচিত এক বৃদ্ধ। তার মুখভরা দাড়ি ও গোঁফ। এখানে এসে কয়েকজনকে ডেকে নেন তিনি।
এই বৃদ্ধ বলেন, আমি অনেক জায়গায় গিয়েছি, কোনো জায়গা পছন্দ হয়নি। গ্রামের শেষ প্রান্তে হাওরে প্রবেশের মুখেই একটি পুকুরপাড়ে লোকজনকে নিয়ে বলেন, জায়গাটি আমার পছন্দ হয়েছে। তোমরা জায়গা দিলে আমি কবরচিল্লা (কবরবাস) দিতে চাই।
তার কথামতো জায়গা দিতে রাজি হন পুকুরের মালিক। সবকিছুই তার কথামতো করেন গ্রামের লোকজন। এ সময় তিনি তাদের বলেন, হাত-পা বেঁধে পুকুরের পানিতে ফেলে দিতে।
এরপর দুই ঘণ্টার জন্য তাকে পানিতে ফেলে দেয় গ্রামের কয়েকজন। পানি থেকে উঠে খাওয়া, ধুমপান সবই হচ্ছে নিয়মিত তার। মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন স্বাভাবিকভাবে।
পাঁচদিন এভাবে চলার পর রোববার কবরবাসের ঘোষণা দেন তিনি। তার ঘোষণা অনুযায়ী, পুকুরের পাড়ে একটি জায়গায় টিনের ছোট্ট ঘর বানিয়ে এর ভেতর কবর খুঁড়তে শুরু করেন গ্রামের কয়েকজন।
রোববার বেলা ১১টায় হাজারো মানুষের সামনে তিনি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ৪০ মিনিট পুকুরের পানিতে ভেসে থাকেন। রোববার বেলা আড়াইটার দিকে তাকে কবরে ঢুকানো হয়। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে তার কবর থেকে উঠার কথা।
কবরে যাওয়ার সময় তিনি ৩০০ গ্রাম আঙ্গুর ও একটি খালি প্লাস্টিকের কৌটা সঙ্গে নিয়ে যান। এ সময় তার স্ত্রী জায়েদা খাতুন ও ছেলে শামীম সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ বৃদ্ধ গণমাধ্যমকে জানান, তার নাম জিন্দা শাহ। বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার তিমিরপুর গ্রামে। বয়স ৮৫ বছর। বিগত ৪৫ বছর ধরে এমন কবর চিল্লা চর্চা করছেন তিনি। এর আগে অসংখ্যবার তিনি বিভিন্ন জায়গায় পানিতে ভেসে কাটিয়েছেন, কবরবাস করেছেন।
কবরে থাকলে মারা যেতে পারেন গ্রামবাসীর এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার মৃত্যু হলে এজন্য কেউ দায়ী হবে না। আমার স্ত্রী-সন্তানরা আছে। তারাই এর দায় নেবে। কারো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
জিতু মিয়ার দাবি, গত ৪৫ বছর ধরে বিভিন্ন মাজারে ঘুরে আধ্যাত্মিক সাধনা করছেন তিনি। নিজেকে হবিগঞ্জ শহরের আরেক আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান মাহবুব রাজার ভক্ত দাবি করেন। তার আদেশেই তিনি কবর চিল্লায় যাচ্ছেন বলে জানান। এর আগেও তিনি ১১বার কবরে চিল্লা দিয়েছেন বলে জানান।
তার স্ত্রী জায়েদা খাতুন জানান, তার স্বামীর আসল নাম জিতু মিয়া। তাদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। স্বামীর খবর পেয়ে তিনি ছুটে এসেছেন। মাঝে মাঝেই তার স্বামী এমন কাণ্ড করে থাকেন। এমন ঘটনার সময় তিনি পাশে থাকেন।
তিনি বলেন, আমি সব সময়ই তা দেখে আসছি। আমার স্বামীর কিছু হলে এজন্য গ্রামবাসী দায়ী হবে না।
জমির মালিক জুয়েল মিয়া জানান, তিনদিনের জন্য কবরবাসে যেতে চাইলে তার জমি ব্যবহারের অনুমতি দেন। তবে বিষয়টি তিনি থানায় অবহিত করেছেন বলে জানান।
জিন্দা পীরের কথায় আতঙ্কিত হয়ে তার বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে এখানে নিয়ে এসেছি বলে জানান তিনি।
২৯ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম