যশোর থেকে : যশোরে একই পরিবারের আপন চার ভাইবোনসহ ছয়জন জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। ওই চার ভাইবোন যশোর শহরের পুরাতন কসবা কদমতলা এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের এ তথ্য দিয়েছেন।
তিনি জানান,‘একই পরিবারের ছয় জঙ্গি ছাড়াও আরও পাঁচ জঙ্গির কথা জানতে পেরেছে পুলিশ। সবমিলিয়ে এই ১১ জঙ্গির ছবিসহ একটি পোস্টার মঙ্গলবার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।’
এদিকে, এসব জঙ্গির মধ্যে তিনজনকে বিভিন্ন সময়ে আটক করা হলেও সরকার পক্ষের আইনজীবীদের বিরোধিতা না থাকায়, আদালত তাদের জামিন দিয়েছেন বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন পুলিশ সুপার। এমনকি এক জঙ্গির পক্ষে যশোর সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
পুলিশের ছাপানো পোস্টারে রয়েছে, যশোর শহরের পুরাতন কসবা কদমতলা এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে তানজিব ওরফে আশরাফুল, তার ভাই তানজির আহমেদ, বোন মাছুমা আক্তার ও মাকসুদা খাতুন, মাকসুদার স্বামী শাকির আহম্মেদ ও মাসুমার স্বামী নাজমুল হাসানের নাম ও ছবি।
পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, ‘উল্লিখিত ছয় জঙ্গির মধ্যে তানজিব হিযবুত তাহরীরের মোশরেক পদধারী। সে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিতো। বাকিরা একই সংগঠনের কর্মী। এছাড়া তাদের প্রশিক্ষক হিসেবে রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর বাড়ির মুসাব্বির ওরফে প্রকাশ ওরফে তন্ময় (৩০) এবং ঢাকার আশকোনা দক্ষিণখান ৪০১ কলেজ রোডের হারেজ আলীর (২৭) ছবিও নামও ছাপা হয়েছে ওই পোস্টারে। তারা ছাড়াও ওই পোস্টারে আরও যে তিন জঙ্গির নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হলো, যশোরের মণিরামপুরের জিএম নাজিমউদ্দিন ওরফে নকশা নাজিম, চাঁচড়া বেড়বাড়ি এলাকার মহিউদ্দিন এবং শার্শার মেহেদি হাসান ওরফে জিম ওরফে হুসাইন।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি তানজিবের বাসাতেই সে (তানজিব) ও হারেজ আলী প্রশিক্ষণ দিতো।’ সম্প্রতি যশোর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করা হিযবুত তাহরীরের চার সদস্যও একই স্থানে প্রশিক্ষণ নিতে যেতো বলে জানান পুলিশ সুপার।
তিনি বলেন, ‘গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর তানজিবকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সরকারি পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) তার জামিনের বিরোধিতা না করায়, আদালত গত মে মাসে তাকে জামিন দেন। একইভাবে তানজিবের ভাই তানজির আহমেদ ও বোন মাছুমা আক্তারকেও একটি ল্যাপটপসহ আটক করে পুলিশ। এই দুটি মামলাতেও সংশ্লিষ্ট সরকারি পিপিরা জামিনের বিরোধিতা না করায়, আদালত তাদের জামিন দিয়ে দেন। তিনজনই বর্তমানে পলাতক আছে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা রায়ের অনুলিপি তুলে দেখেছি। সরকারি পিপিরা জামিনের বিরোধিতা না করায় আসামিদের জামিন দেওয়ার কথা লিখেছেন বিচারকরা। তানজিবের পক্ষে যশোর সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রত্যায়নপত্রও দিয়েছেন।’ এসব বিষয় সরকারকে জানানো হয়েছে বলেও পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘স্পর্শকাতর এ বিষয়গুলোতে আমরা (পুলিশ) খুবই সিরিয়াস। এসব জঙ্গিদের ধরতে আমরা একেকজনের পেছনে ৬-৭ বার করেও অভিযান চালিয়েছি। কড়া নজরদারিও অব্যাহত রয়েছে।’
এর আগে যশোর পুলিশ পাঁচজনকে জঙ্গি হিসেবে সাব্যস্ত করে তাদের নাম, ছবি, ঠিকানাসহ পোস্টার ছেপেছিল। সেই জঙ্গি তালিকার এক নম্বরে থাকা তরুণ দুদিন পরই নববধূকে নিয়ে যশোর ফিরে হাজির হয় কোতোয়ালি থানায়। পুলিশ তদন্ত করে তার জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা পায়নি। বর্তমানে ওই তরুণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।
এছাড়া আগের তালিকায় থাকা রাব্বি নারায়ণগঞ্জে পুলিশি অভিযানে নিহত হয়েছে। অন্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। পুরনো তালিকার দুজনের নাম বর্তমান তালিকায় স্থান পেয়েছে।
পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, ‘এটি পুলিশের দ্বিতীয় তালিকা ও পোস্টার। নতুন করে খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হয়ে পুলিশ তালিকা সংশোধন করবে।’ - বাংলা ট্রিবিউন
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি