যশোর: জলাবদ্ধতার কারণে যশোরের অভয়নগরের মানুষ যখন রীতিমতো বিরক্ত, প্রশাসনের হস্তক্ষেপের আশায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত, ঠিক তখনই এক অভিনব ডাক এলো। ফেসবুকের মাধ্যমে স্বেচ্ছাশ্রমের আহ্বান জানালেন অভয়নগরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মনদীপ ঘরাই। ওই ডাকে সাড়া দিয়ে উপজেলার দুটি খাল থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করতে শুক্রবার (৪ আগস্ট) পানিতে নেমেছেন হাজার খানেক মানুষ।
এ ব্যাপারে ইউএনও বলেন, ‘গত ৩০ আগস্ট নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসে ২শ’ তরুণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন করেছেন এক হাজার ২শ ৩৫ জন, এসেছেন দুই হাজারের অধিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভেবেছিলাম, ফেসবুকে গল্প আর গেমস নিয়েই ব্যস্ত থাকেন তরুণরা। কিন্তু তাদের সাড়া পেয়ে আমার সে ধারণা বদলে গেছে।’
অভয়নগরের প্রায় ১৬ কি.মি. দুটো খাল পুরোটাই কচুরিপানায় ভরে থাকায় পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছিল। এটি পরিষ্কার থাকলে জলাবদ্ধতা কমে যাবে বলে জানান মনদীপ ঘরাই।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় আড়াই ঘণ্টা কচুরিপানা তুলে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন নওয়াপাড়া মডেল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র দীপ হালদার। তিনি বলেন, ‘সকালে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মনদীপ ঘরাই জলে নেমে আমাদের সঙ্গে কচুরিপানা উচ্ছেদের কাজ শুরু করেন। বেশ খানিকটা সময় থেকে তিনি চলে যান সামনের খালে। এরপর আশপাশের সব বয়সের লোকজন নেমে পড়েন জলে।’
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য পাল বলেন, ‘কচুরিপানা অপসারণ করা হলে সাময়িক স্বস্তি হবে। কিন্তু স্থায়ী সমাধানের জন্যে ভবদহ স্ল্যুইস গেটের ২১ ও ৯ নম্ভেবর ভেন্টের মধ্য দিয়ে সরাসরি নদী সংযোগ; হরিহর, আপারভদ্রা ও বুড়িভদ্রায় জরুরি ভিত্তিতে পলি অপসারণ; বিল কেদালিয়ায় টিআরএম চালুসহ সকল খাল পুনরুদ্ধার হবে। এছাড়াও নদীর ধারে অবৈধ ঘের উচ্ছেদে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
এ ব্যাপারে ভাটবিলা গ্রামের মোহনলাল বলেন, ‘স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে জল নিষ্কাশনের জন্য কাজ করছি। কিন্তু এটি কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। সরকার এখন পর্যন্ত জল সরানোর স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। প্রতি বর্ষায় আমাদের এমন ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে।’
স্থানীয়রা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কচুরিপানা অপসারণে সাড়ে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সে টাকার কী অবস্থা তা আমাদের জানা নেই।
পাউবোর সাড়ে তিন লাখ টাকা বরাদ্দের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মনদীপ ঘরাই বলেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি দেখছি। কিন্তু তাদের দেখা পর্যন্ত সময় নিলে এখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে অপেক্ষা করিনি। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সাময়িক সমাধানের পথে গিয়েছি।’
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস