যশোর: দুই কবজি দিয়েই স্বপ্নজয়ের সংগ্রাম করছে জাহিদুল ইসলাম। আঙুলবিহীন দুই হাতের কবজির মধ্যে কলম গুঁজে লিখে চলেছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। এভাবেই পিইসি উত্তীর্ণ হয়ে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে।
জাহিদুল যশোরের মণিরামপুর উপজেলার আগরহাটি গ্রামের ভাটাশ্রমিক মাহবুবুর রহমান ও গৃহিণী রাশিদা বেগমের ছেলে। সে উপজেলার ধলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। কেবল পড়ালেখা নয়, জাহিদুল তার শারীরিক এ অবস্থা নিয়ে ক্রিকেট খেলায়ও বেশ পারদর্শী। চালাতে পারে সাইকেলও।
জাহিদুল জানায়, যে কয়টি পরীক্ষা দিয়েছে তাতে ভালো ফলাফল করার আশা করছে সে। মণিরামপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ১০৫ নম্বর কক্ষে সহপাঠীদের সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছে সে। জাহিদুলের স্বপ্ন লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ক্রিকেট টিমে খেলার ইচ্ছাও রয়েছে তার। কিন্তু লেখাপড়া না শিখলে তার ভবিষ্যৎ জীবনটাই যেন অন্ধকার। সে চিন্তা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি বেশি ঝোঁক তার।
দিনমজুর পরিবারের সন্তান জাহিদুলকে নিয়ে দুশ্চিন্তা তার মা-বাবার। লেখাপড়া না শিখলে তার ভবিষ্যৎ কী হবে? কীভাবে তার জীবন চলবে এসব ভাবনা তাদের মাথায়। বাবা-মায়ের ইচ্ছা তাই তাকে লেখাপড়া শেখানো। তবে অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে কতদূর তাদের আশা পূরণ হবে- এ নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
জাহিদুলের বাবা মাহবুবুর রহমান জানান, ভাটায় শ্রমিকের কাজ করে চার ছেলেমেয়েসহ ছয়জনের সংসার কোনোরকমে চলে। যে কারণে জাহিদুলের পেছনে অর্থ ব্যয় করার মতো সামর্থ্য নেই তাদের। বছর তিনেক আগে জাহিদুল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান লিখে উপজেলা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে নিজেই গেয়ে শোনায়। এরপর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নজরে আসে সে।
জাহিদুলের মা রাশিদা বেগম জানান, লাউড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার দুটি হাত পুড়ে যায়। জীবন বাঁচাতে চিকিৎসকরা তার দুই হাত কেটে ফেলেন। এরপর কবজি দিয়েই লেখাপড়া শুরু করে জাহিদুল। ওই বিদ্যালয় থেকেই সে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৪.৭৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। জাহিদুল লেখাপড়া শিখে মানুষ হতে চায়; আর তার স্বপ্নপূরণে সহযোগিতা প্রত্যাশা জাহিদুলের বাবা-মায়ের।