মোঃ আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি জেলা শহর ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের গেটের পাশে খোলা অবস্থায় অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রির ধুম পড়েছে। শীতে প্রতিদিনই শিশু শিক্ষার্থীরা এসব খাবার খাচ্ছে। ফলে প্রচন্ড স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের পুরাতন কলেজ সড়কে জেলার স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝালকাঠি সরকারী দুটি স্কুল অবস্থিত। বিদ্যালয়ের মূল ফটকের বাইরে রিকশা-ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় ফুচকা ও চটপটি বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। কালো করে পুরানো তেলে আটার ছোট ছোট দলা ভাজি করে ছোট পুরির মত তৈরী করে তার ভিতরে আলু ভর্তা ঢুকিয়ে, একটি কাপে সামান্য টক পানি দিয়ে প্রতি প্লেট ফুচকা বিক্রি করছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।
হোটেলে মুরগীর অবশিষ্টাংশ (পা, পাখনা, নাড়িভুরি) স্বল্পমূল্যে ক্রয় করে চটপটি বানিয়ে ৩০ টাকা করে প্লেট বিক্রি করছে। বিদ্যালয়ের পাশেই হোটেল রেস্তোরাগুলোতে খোলা অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া তেলে ভাজা শিঙাড়া, পেঁয়াজু ও আলুর চপ। সেখানেও শিশুদের ভিড়, মজা করে খাচ্ছে তারা। এ দৃশ্য শুধু এ দুটি স্কুল ফটকেরই নয়।
দুটি স্কুলের মধ্যবর্তি স্থানে উত্তরে সামান্য কিছুদূর এগিয়ে বেসরকারী শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আব্দুল ওয়াহাব গাজী শিশু বিদ্যালয় (কেজি স্কুল)। সেখানের পাশেই রয়েছে শিশু পার্ক। পার্কেও রয়েছে ফুচকা-চটপটি বিক্রির দোকান। একে একে আরও কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষ প্রতিষ্ঠান ঘুরে মিলল একই দৃশ্য। কোথাও অস্বাস্থ্যকর পানীয়, কোথাও ভাজা-পোড়া খাবার বিক্রির ধুম। বিক্রেতা আবদুল আজিজ জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যালয় ফটকসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে এ ফুচকা বিক্রি করছেন। কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ে কেন্টিন না থাকলেও সততা স্টোর নামে একটি দোকান রয়েছে। কিন্তু সেখানে সেই রকম চাহিদামত কোন খাবার না থাকায় ফলে ক্ষুধা বা তৃষ্ণা পেলে বাধ্য হয়ে বাইরের এসব খাবার খেতে হয়।
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডাঃ অসিম কুমার সাহা বলেন, অস্বাস্থ্যকর এসব খাবার খেয়ে পেটের পিড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। এসব খাবারে ক্ষতিকর কিন্তু মুখরোচক দ্রব্য মেশানো হওয়ায় বাড়ির খাবারের প্রতি অনীহা ও অরুচি বাড়ছে শিশুদের। এ ছাড়া খোলা অবস্থায় বিক্রি করায় নিম্নমানের এসব খাবার থেকে শিশুদের হেপাটাইটিস, টাইফয়েড এবং লিভার ও কিডনির বিভিন্ন জটিল সমস্যা হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। ঝালকাঠি সরকারী বালক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শ্যামল চন্দ্র শর্মা বলেন, ‘আমরা বহুবার বিদ্যালয় ফটক থেকে এসব খাবার বিক্রির দোকান সরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছি। ফটক থেকে সরালেও এসব বিক্রেতা আশপাশেই কোথাও গিয়ে দোকান বসান।’ বিদ্যালয়ে ক্যানটিনের বিষয়ে তিনি বলেন, স্কুলপর্যায়ে ক্যানটিন-সুবিধা দেওয়া একটু কঠিন। তারপরেও সততা স্টোর নামে একটি দোকান এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ে টিফিনের ব্যবস্থা রয়েছে।
২৭ জানুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস