মোঃ আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি প্রতিনিধি: প্রচণ্ড গরমে ঝালকাঠিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে ২৫ জন করে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও জেলার চার উপজেলায় ইনডোর এবং আউটডোরে ৫ শতাধিক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক নারী।
এদিকে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে সাড়ে ৬ মাস ধরে আইভি (শিরায় দেওয়ার) স্যালাইন না থাকায় এবং অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত না থাকায় বাড়তি ঝামেলায় পড়েছেন রোগীরা। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ২৯৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৭ দিনে ৩ শতাধিক ব্যক্তি ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও আউটডোরে আরও ২শ' লোকের বেশি চিকিৎসা নিয়েছে। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সদর হাসপাতালে আইভি স্যালাইন একদম শূন্য এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত আইভি স্যালাইন নেই। সঙ্কট আছে ডায়রিয়ার জন্য দরকারি অন্যান্য ওষুধপত্রেরও। এমনকি শিশুদের স্যালাইন দেয়ার ‘ক্যানোলা’ও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। বলা হচ্ছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেবল খাবার স্যালাইনই বিতরণ করছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি সদর উপজেলার পোনাবলিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল গ্রামের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তারের নানা মোকসেদ আলী কাজী বলেন, সকাল থেকে এ পর্যন্ত বাইরে থেকে তিনটি স্যালাইন কিনে আনতে হয়েছে। ‘ডায়রিয়ার স্যালাইন যদি বাইরে থেকে কিনতে হয়, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার কী?’ নৈকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিতোষ কুমার রায় বলেন, আমার স্ত্রী কনক রানি দাস সামজসেবা অধিদফতরে চাকরি করে। মঙ্গলবার রাত থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। বুধবার সকালে তাকে এখানে নিয়ে আসলে এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক দেখতে আসেন নি। কিন্তু এখানে দায়িত্ব পালনকারী নার্সরা পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে, তারপরও তারা দায়িত্বে অবহেলা করছেন না। শহরতলীর কলেজ মোড় বিকনা এলাকার তরুণী জায়েদা, নলছিটির কুলকাঠি এলাকার তরিকুল ইসলাম (টিটু), পলি বেগম, সদর উপজেলার তারুলী গ্রামের শ্যামল হালদারের স্ত্রী আরতি রানী হালদার, বারৈগাতি গ্রামের মীর আবুল হোসেনের ছেলে পারভেজ, শহরের ব্র্যাক মোড় এলাকার দুই বছরের শিশু আব্দুল্লাহ, পোনাবারিয়া গ্রামের আব্দুর রব (৪৫), আগরবাড়ি গ্রামের রুস্তম সিকদারের মেয়ে বিথি (১১), মহদিপুর এলাকার সিমা (৩০) ও পোনাবালিয়া গ্রামের রুনু বেগম (৪৭) ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর চাপ বেশি থাকায় ওয়ার্ডের ফ্লোরে বেড এবং কোনো কোনো বেডে ২ জন করে স্থান নিয়েছে। রোগীদের চাপে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা না থাকায় ওয়ার্ড থেকে দুর্গন্ধ আসায় রোগীর স্বজনদের বারান্দায় এবং ওয়ার্ডের বাইরে অবস্থান করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় এক যুবক বলেন, আমি ওখানে (ডায়রিয়া ওয়ার্ডে) যাবো না। যে পরিবেশ ও দুর্গন্ধ তাতে আমারও ডায়রিয়া হতে পারে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের এক নার্স (দায়িত্বরত) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের এখানে আইভি স্যালাইন দীর্ঘ দিন যাবত শূন্য রয়েছে। এখানে খাবার স্যালাইন আছে, রোগী আসলে তাই দেয়। আমাদের বক্তব্য দেয়া নিষেধ আছে।’ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক সঞ্চিতা বলেন, ‘প্রচন্ড গরমে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের চাপ বেড়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে, বিশুদ্ধ পানি পান এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ডায়রিয়া থেকে বাঁচা যায়। প্রাথমিকভাবে পাতলা পায়খানা শুরু হলে বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি, তরল খাবার, ভাতের মাড়, স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। বেশি অসুস্থ হলে হাসপাতালে এসে ভর্তি হতে হবে।’
ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. আবদুর রহিম বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে তাপদাহের এই সময়ে ১৯ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ২৯৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। আইভি স্যালাইন সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখানের স্টোর কিপারকে স্যালাইন নিয়ে আসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
২৮ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস