ঝিনাইদহ থেকে : শিক্ষালাভের শেষ ধাপ তারা উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। পেলেন না সার্টিফিকেট, হলো না পরিবারের স্বপ্নপূরণের অবলম্বন চাকরি; অনেকের শুরু করা হলো না ব্যবসাটা। জীবনের সবচেয়ে উদ্দীপনা ভরা সময়টাতেই বিনা দোষে এক নিমিষেই ঝরে গেলেন তারা। বলা যায়, সামান্য ভুলে কেড়ে নেওয়া হলো তাদের জীবন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারের তেল পাম্পের কাছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের বেশির ভাগই যে ছিলেন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। জানা গেছে, যশোরের এম এম কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন তাদের অনেকেই। বাকিরা ছিলেন অন্য কলেজের একই শ্রেণির শিক্ষার্থী। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ছিল সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগের (এমএসএস) এর মাস্টার্স পরীক্ষা। পরীক্ষা দিয়ে তারা কলেজের সামনের স্টপেজ থেকে গড়াই নামের বাসটিতে উঠেছিলেন।
বাসে চলছিল প্রশ্নপত্র কমন পড়া না পড়াসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা আর পরস্পরের খুনসুঁটি। অনেকে নিজের স্বপ্ন জানাচ্ছিলেন অন্যদের। এমনই সময় দুপুর তিনটার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বারোবাজারে দ্রুতগামী বাসটি ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। বাসটি উল্টে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে এর মাঝের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন এবং হাসপাতালের নেওয়ার পর আরও দুজন নিহত হন।
নিহতদের পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে কালিগঞ্জ সুন্দরপুর গ্রামের ইসহাক আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (২৫) এমএসএস ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পরিবারের সবাই অপেক্ষা করছিল তার জন্য। কিন্তু, তিনি ফেরেন লাশ হয়ে। সাদা কফিনে মোড়া লাশটি যখন বাড়ির আঙিনায় ফিরলো তখন সবাই বাকরুদ্ধ। চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ গ্রামের গৃহবধু রেশমা খাতুনও একই বাসে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিলেন নগদা গ্রামের শুভ। তিনিও মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিলেন।
মৃত্যুর মিছিল কেড়ে নিয়েছে শুভকেও। আরও জানা গেছে, ঝিনাইদহের সদর উপজেলার নাথকুন্ডু গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে ইউনুস আলী, কালীগঞ্জের রণজিৎ দাসের ছেলে সনাতন দাস ও কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিণদিয়া গ্রামের নতুন মসজিদ পাড়ার মীর মোহাম্মদের ছেলে সোহাগ হোসেনও এমএসএস পরীক্ষা দিয়ে ওই বাসে বাড়ি ফিরছিলেন। একসঙ্গে এমন ৬ জন মাস্টার্সের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর জানতে পেরে এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া।
শোক বইছে চুয়াডাঙ্গায় রেশমার গ্রামেও। এমন মৃত্যুর শোক পড়েছে এ শিক্ষার্থীর কলেজগুলোতেও। তাদের বন্ধু সহপাঠীরা জানান, এ খবর জেনে তারা হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বন্ধু-বান্ধবীদের জন্য জানাচ্ছেন শোক। খবর ছড়াচ্ছে পুরো কলেজের সব শিক্ষার্থীর মধ্যে। চলছে দোয়া প্রার্থনা। জানাজা শেষে তাদের জন্য শোকসভা করার ব্যাপারে বন্ধুদের আলোচনাও চলছে রাতভর।