রাশিদুল ইসলাম, খুলনা থেকে : খুলনা মহানগরীর সদর থানা ও সোনাডাঙ্গা থানার ১৬টি ওয়ার্ড নিয়ে খুলনা-২ আসন। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি-জায়ামাত সমর্থিত। মাত্র দু’টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর বিজয়ী হয়েছিলেন।
এ আসনটি বরাবরই বিএনপির দুর্গ হিসেবেখ্যাত। ২০০১ সালে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়া আসনটি ছেড়ে দেয়ায় উপনির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আজগর লবি এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকারের দাপটের সময়েও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কাছে পরাজিত হন। তবে ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বর্জন করায় এখানে এমপি নির্বাচিত হন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান।
খুলনা-২ আসনে ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম এ বারী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আর কোনো জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। যে কয়টি নির্বাচনে বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে বরাবরই বিএনপি প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মহানগর সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক জয়ী হন। তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনে তালুকদার খালেক বিপুল ভোটের ব্যবধানে মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির কাছে পরাজিত হন।
এবার আওয়ামী লীগ খুলনা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। নেতাকর্মীদের মাঝে তার শক্ত অবস্থান যেমন রয়েছে তেমন প্রতিপক্ষের কাছে তার সমালোচনাও রয়েছে। তবে এমপি মিজানের অনুসারীরা দাবি করেন বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে উন্নয়ন হয়েছে বেশি। আর এ উন্নয়নে ভোটাররা আবারও আওয়ামী লীগকে বেছে নেবেন। আগামীতেও দল এ আসন থেকে তাকেই মনোনয়ন দেবে।
সাংসদ মিজানুর রহমান মিজান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, কাজ করতে গেলে আলোচনা-সমালোচনা দুটোই থাকবে। তারপরও আগামী নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার উন্নয়নের স্বার্থে আমাকেই মনোনয়ন দেবেন।
এদিকে গত ৯ই জুলাই আওয়ামী লীগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের বলেন, যেসব নেতার কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না। এই ঘোষণা শুনে খুলনা-২ আসনে নির্বাচনের জন্য সক্রিয় হয়ে মাঠে নেমেছেন খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। ইতিমধ্যেই তিনি সম্মিলিত নাগরিক সমাজের ব্যানারে নগরবাসীর সমস্যা নিয়ে সামাজিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে।
অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন যেসব ব্যক্তির কারণে দলের ইমেজ নষ্ট হয়েছে তাদের আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেবেন না। এই ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে আমি দলীয় মনোনয়ন পাবো বলে আশাবাদী।
এবারও এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু। মাঠ পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে তার শক্ত অবস্থান। ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চল থেকে একটিমাত্র আসনে বিএনপি প্রার্থী নির্বাচিত হন। তিনি হলেন খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু। যে কারণে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডেরও সুদৃষ্টি রয়েছে তার উপরে। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি আলী আজগর লবির অনুসারীরা দাবি করছেন তিনিও এ আসনের প্রার্থী হবেন।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের এমপিদের টেন্ডারবাজি, পরিবহন সেক্টর দখল, মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা খুলনার মানুষের কারো অজানা নয়। এদের অত্যাচার নির্যাতনে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আগামী নির্বাচনে জনগণ যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে ব্যালটের মাধ্যমে সকল অপকর্মের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবেন। ধানের শীষের পক্ষে খুলনাবাসী ভোট দিয়ে আবারো প্রমাণ করবে খুলনার মাটি বিএনপির ঘাঁটি। ভোটাররাই আমাদের ভরসা। তারা কখনই আমাদের নিরাশ করেননি। আগামী নির্বাচনেও নিরাশ করবেন না।
এছাড়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, মহানগরীর সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আবুল হোসেনকে এ আসনে প্রার্থী করার কথা ভেবেছিল। কিন্তু কিছু দিন আগে শেখ আবুল হোসেন জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। বর্তমানে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সদ্য জাতীয় পার্টিতে যোগদানকারী খায়রুল ইসলাম ও এস এম মুশফিকুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মহানগরী সভাপতি মাওলানা মোজাম্মেল হক ও সহসভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিনের নাম শোনা যাচ্ছে। খুলনা-২ অর্থাৎ সদর এই আসনে আর কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি