খুলনা থেকে : বৃহস্পতিবার খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রিয়া সাহাকে একজন 'ভদ্র মহিলা' বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার বিকালে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রিয়া সাহা নামের একজন ভদ্র মহিলা আমেরিকাতে বক্তব্যে দিয়েছেন। তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিত। তার পরের দিন বলছেন, তাকে আত্মপক্ষের সমর্থনের সুযোগ দেওয়া উচিত। তার একটি ভিডিও বের হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, এটা তো আমার কথা নয়, এটা প্রধানমন্ত্রীর কথা।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে আমরা জানতে চাই, দেশবাসী জানতে চায়, কোনটা সত্যি? এটা কি প্রধানমন্ত্রীর কথা, না কি প্রিয়া সাহার কথা? আমরা জানতে চাই, এই চক্রান্ত কিসের চক্রান্ত? আন্তর্জাতিক চক্রান্তের কথা বলা হচ্ছে। আমরা জানতে চাই, সেই আন্তর্জাতিক চক্রান্তটা কি? বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের অস্তিত্ব এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে? আমরা জানতে চাই। এই জবাব আজকে এই সরকারকে অবশ্যই দিতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কি বেগম জিয়ার মুক্তি চাই। যদি চাই তাহলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্য, ঐক্য এবং ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। তাই দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আজকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি সমাবেশ নিয়ে কিছু মানুষ প্রচার করছে যে, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঠিক নেই। কিন্তু ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট ঠিক আছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী চোখের চিকিৎসা জন্য লন্ডনে গিয়েছেন। আমরাও চাই, উনি সুদৃষ্টি নিয়ে ফিরে আসুক। উনি দেখুক, এদেশের মানুষ কি চায়। মানুষের মনে ভাষা পড়ুক। তাহলেই উনি বুঝতে পারবেন, এদেশের মানুষ বেগম জিয়ার মুক্তি চায়।
ফখরুল বলেন, বেগম জিয়াকে সরকার সঠিক চিকিৎসা দিতে পারছে না। কারণ সরকারের স্বদিচ্ছার অভাব রয়েছে। গতকাল আমি খোঁজ নিয়েছি যে, দেশনেত্রী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার ব্লাড সুগার বারবার উঠানামা করছে। তার জিভের মধ্যে আলসার হয়েছে। এখন তিনি শ্বাসকষ্টের জন্য নিশ্বাস নিতে পারছেন না। আজকে আমরা এই সভা থেকে দাবি জানাচ্ছি, সুচিকিৎসার জন্য বেগম জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা (বিএনপি) এতো দিন পরে কেনো বুঝলাম, আইনিভাবে নয়, সংগ্রামের মাধ্যমেই খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে। আমরা কেনো এতো দিন কিছু করলাম না? তাহলে কি জেলের মধ্যে বেগম জিয়ার মৃত্যু হলে তার লাশ নিয়ে আমরা মিছিল করবো? আর আমি শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাই। কারণ উনি ভোট চোর।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমান সরকার ডেঙ্গু মশা মারতে পারে না। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীদের মারতে পারে। আর সরকারের কিছু লোক আছে, আমাদের কামড় দেয় এবং চুষে চুষে রক্ত খায়। এই অবস্থা চলতে পারে না। এজন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে নাই। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।
সমাবেশে খুলনা মহানগর ও জেলাসহ বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, নড়াইল ও মাগুরার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার প্রতিকৃতি সংবলিত প্লাকার্ড ও মিছিল নিয়ে যোগ দেয়। এসময় কর্মীরা ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ ‘আর কোনো দাবি নাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি ও জেলা সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খানের পরিচালনায় বক্তৃতা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম নুরুল ইসলাম, মসিউর রহমান, সৈয়দ মেহেদী আহামেদ রুমী, কবির মুরাদ, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, জেলা বিএনপি সভাপতি শফিকলু আলম মনা প্রমুখ।