এমটি নিউজ২৪ ডেস্ক : খুলনার কয়রা উপজেলায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা গ্রামের খালেরগোড়া এলাকায় রবিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে উঁচু জোয়ারে বাঁধটি ভেঙে যায়। আরও পড়ুন: এবারের এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হবে যে দেশ! জানালেন রিকি পন্টিং
এলাকাবাসী জানান, চার থেকে পাঁচ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের চাপ সামলাতে না পেরে বাঁধ ভেঙে আশপাশের বাড়িতে পানি উঠেছে।
মানুষ গরু-ছাগল উঁচু বাঁধের ওপর রেখে এসেছে। রাতের জোয়ারে আবার পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে তারা।
বারবার একই স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিকেই দুষছেন স্থানীয় লোকজন। তাদের দাবি, এক মাস আগে রিংবাঁধ দেওয়া হলেও সেটি রক্ষণাবেক্ষণ বা মজবুত করার কোনো ব্যবস্থা নেননি তারা। এ কারণে দুর্বল বাঁধ বারবার ভেঙে যাচ্ছে।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংস্থার সভাপতি মো. আবু সাঈদ খান বলেন, গত ১৭ জুলাই বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অন্তত ১০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছিল।
দুইদিন পর রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর পর মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফেরে। এক মাসে অনেকটা ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সবাই।
কিন্তু আবার বাঁধ ভেঙে আশপাশের সবার বাড়িতেই কমবেশি পানি উঠেছে। বাঁধ না ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘুম ভাঙে না। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত না করে ভেঙে যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির তোড়জোড় শুরু হয়। ততক্ষণে নিঃস্ব হয় সাধারণ মানুষ।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ওসমান গনি বলেন, গত শনিবার দুপুরের জোয়ারে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর সবার চেষ্টায় আবার তা মেরামত করা হয়।
কিন্তু গতকাল রবিবার জোয়ারের পানির উচ্চতা এতটাই বেশি ছিল যে ওই বাঁধ আর টিকতে পারেনি। প্রায় ১০০ মিটারের মতো ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে দক্ষিণ বেদকাশী, চরামুখা, হলুদবুনিয়া, বিনাপানি, পদ্মপুকুরসহ ১০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে আমনের বীজতলাসহ চিংড়ি ঘেরের ক্ষতি হয়েছে।
ওই এলাকা পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা বিভাগ-২ এর আওতায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই বিভাগের পরিচলন ও রক্ষণাবেক্ষণের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, প্রথম বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর রিং বাঁধ দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি মজবুত করা যায়নি। সেখানে মাটির মান খুব বেশি ভালো নয়।
তিনি জানান, তাছাড়া জোয়ার-ভাটার কারণে বেশি সময় কাজ করা যায় না। এ কারণেই মূলত বাঁধটি বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আপাতত পানি প্রবেশ বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর রিং বাঁধ মজবুতের চেষ্টা করা হবে।
কয়রার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, রবিবার দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা রিং বাঁধ মেরামত করার সময় জোয়ারের পানির চাপে প্রায় তিনটি স্থান ভেঙে গেছে।
আগামী ভাটার সময় আবারও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হবে। পানিবন্দিদের জন্য এক হাজার ব্যাগ ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।