খুলনা : খুলনায় রাষ্ট্রয়াত্ত সাতটি পাটকলের শ্রমিকরা রাজপথ-রেলপথ অবরোধ তৃতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে। হাজার কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধের ঘোষণার পর সিবিএ ও নন সিবিএ নেতাদের বিরোধের মধ্যেই এই কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।
পাটকল শ্রমিক সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার ভোর ৬টা থেকে তাদের সকাল-সন্ধ্যা কর্মসূচি শুরু হয়েছে; বন্ধ রয়েছে পাটকলের উৎপাদন। পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ, ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতাসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন পাটকল শ্রমিকরা।
পাটকল শ্রমিক সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের ডাকে গত সোমবার অনির্দিষ্টকালের এই সকাল-সন্ধ্যা কর্মসূচি শুরুর পর ওইদিনই মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনকে (বিজেএমসি) এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের নির্দেশ দেন। ওই অর্থ দিয়ে সারাদেশের সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের কর্মীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হবে বলে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।
সরকারের ঘোষণার পরও অবরোধ প্রত্যাহার না করে পাটকল শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, কত টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে তা না জেনে তারা আন্দোলন থেকে সরছেন না।
এই পরিস্থিতিতে চলমান আন্দোলনের বাইরে থাকা ১৮টি পাটকলের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও সচিব এম এ কাদের সরকার। বৈঠকে থাকা নেতাদের বেশিরভাগই ছিলেন সরকারদলীয় শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
আন্দোলনে থাকা খুলনা অঞ্চলের পাটকলের শ্রমিক নেতাদের এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা ‘নন-সিবিএ’ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে আপত্তি জানিয়ে সম্মেলন কক্ষের বাইরে অবস্থান নেন। পরে প্রায় আধা ঘণ্টা মন্ত্রণালয়ের করিডোরে দুই পক্ষের নেতাদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি চলে।
বৈঠক শেষে পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়েছি। সবাইকে বুধবারের মধ্যে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। কর্মসূচি প্রত্যাহার না করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রমিকদের দুই সপ্তাহের বেতন বুধবারের মধ্যে দেওয়া হবে এবং এই টাকা ইতোমধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। কিন্তু মন্ত্রীর ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে খুলনা অঞ্চলের অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার পাট মন্ত্রণালয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, বরং কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার বেলা আড়াইটায় পাট মন্ত্রাণালয়ে ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকের পর অবরোধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।
বকেয়া পরিশোধসহ পাঁচ দফা দাবিতে সাতটি পাটকলের প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক গত ৫ এপ্রিল থেকে কাজ বন্ধ রেখে প্রতিদিন আট ঘণ্টা রাজপথ-রেলপথ অবরোধ শুরু করেন।
এর তিন দিনের মাথায় খুলনার জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান আন্দোলনরত শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধানের আশ্বাস দিলে কর্মসূচি তিন দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে সমধান না হওয়ায় সোমবার আবারও উৎপাদন বন্ধ রেখে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ শুরু করেন শ্রমিকরা।
খালিশপুর থানার ওসি আমীর তৈমুর ইলী জানান, বুধবার ভোর ৬টা থেকে নগরীর নতুন রাস্তা মোড়ে শ্রমিকরা অবরোধ করেছে।
একইভাবে আটরা শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা খুলনা যশোর মহাসড়ক অবরোধ করেছে বলে জানান খানজাহান আলী থানার ওসি মো. আখতার হোসেন। এই অবরোধের কারণে দূর-পাল্লার যানবাহন চলতে হচ্ছে ঘুরপথে। রেল যোগাযোগও ব্যাহত হওয়ায় গরমের মধ্যে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
১৩ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস