খুলনা : বাঁশবাগানে মায়ের পরকীয়া দেখে ফেলায় খুন হলো ছেলে। হাসমির মা সোনিয়া বেগমের সঙ্গে ৬ জুন আড়ংঘাটার বাড়ির পাশে ওই বাগানে ছিলেন নুরুন্নবী (২২) ও রাসেল (১৯)। এ ঘটনা শিশু হাসমি দেখে ফেলে।
এরপরই তারা হাসমিকে ধরে নিয়ে ছুরি দিয়ে গলা কেটে খুন করে। তার লাশ গুম করতে সিমেন্টের বস্তায় ভরে খুলনা বাইপাস সড়ক সংলগ্ন সরদার ডাঙ্গা বিলের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়।
রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারাক্তিমূলক জবানবন্দিতে এভাবেই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন হাসমির মায়ের দুই প্রেমিক নুরুন্নবী ও রাসেল।
শনিবার তারা খুলনা মহানগর হাকিম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক ইকবালের কাছে এ জবানবন্দী প্রদান করেন।
জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র বিশেষ শাখার এডিসি শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ১৬ জুন থেকে দুই আসামিকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শনিবার তৃতীয়দিন দুপুরে তাদের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
এ সময় তারা শিশু হাসমি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করার কথা জানায়।
এরপর ম্যাজিস্ট্রেট তাদের ভাবনার জন্য দুই ঘণ্টা সময় দেন। পরে তারা দুজন পৃথকভাবে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি প্রদান করেন বলে এডিসি শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু জানান।
তিনি বলেন, শনিবার রিমান্ডের তৃতীয়দিনে আসামিদের স্বীকারোক্তিতে শিশু হাসমিকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে ১১ জুন শিশু হাসমির মা সোনিয়া বেগম খুলনা মহানগর হাকিম ফারুক ইকবালের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ হত্যাকাণ্ডের তথ্য প্রকাশ করেন।
পুলিশ তাকে সন্দেহজনকভাবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ঘাতক মা সোনিয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
আড়ংঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম খান বলেন, গত ৯ জুন আড়ংঘাটা এলাকা থেকে শিশু হাসমি মিয়ার (৯) বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ৬ জুন থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল।
লাশ উদ্ধারের পর শিশুটির বাবা মো. হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে তিনজনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার স্ত্রী সোনিয়ার পরকীয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল।
এর ফলে পুলিশ সোনিয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাতেই শিশু হাসমি হত্যার মূল রহস্য জানা যায়। এরপর আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছিল।
এর মধ্যে নুরুন্নবী ও রাসেল ১৫ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু আদালত জামিন না মঞ্জুর করে দুজনকেই কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এরপর ১৬ জুন আদালতের অনুমতি নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে মানিকতলার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খানের মেয়ে সোনিয়ার সঙ্গে মো. হাফিজুর রহমানের বিয়ে হয়। এর ছয় মাস পর হাফিজুর রহমান বিদেশে চলে যান।
স্বামীর অনুপস্থিতিতে সোনিয়ার উচ্ছৃঙ্খলতা বেড়ে যায়। তিনি বিভিন্ন যুবকদের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।
স্বামী হাফিজুর রহমান দেশে আসার পর বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর হাফিজুর রহমান স্ত্রীকে শোধরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ছয় মাস আগে তালাক দেন।
১৮ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম