বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬, ০৪:৫৮:০৪

১৫ বছর পর হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে ফিরে পেলেন মা

১৫ বছর পর হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে ফিরে পেলেন মা

মামুন রেজা: সংসারে অভাবের কারণে ৯ বছরের মেয়ে শিখা আক্তারকে ঢাকায় অন্যের বাসায় কাজ করতে পাঠিয়েছিলেন মা রহিমা খাতুন। সেখান থেকে হারিয়ে যায় শিখা। এরপর কেটে গেছে ১৫ বছর। দীর্ঘ এই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে তার ঠাঁই মিলেছে খুলনার একটি বাড়িতে। আর সেখানেই ১৫ বছর পর মাকে খুঁজে পেয়েছে শিখা। কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার উত্তর পুমদী গ্রামের গিয়াস উদ্দিন ও রহিমা খাতুন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান শিখা। তুলি নামের স্থানীয় এক নারী কাজ দেওয়ার নাম করে ৯ বছরের শিখাকে ঢাকায় নিয়ে যায়।  সেখানে শিখাকে একটি বাসায় রেখে তুলি চলে যায়। এর কিছুদিন পর মারা যায় তুলি। ওই বাসার কর্তা শিখার ওপর নানা রকম অত্যাচার করত।

পরে ওই বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার মাধ্যমে শিখা চলে যায় ঢাকার এক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায়। সেখানে বছরখানেক থাকার পর পুলিশ কর্মকর্তার গ্রামের বাড়িতে থাকতে শুরু করে শিখা। ওই পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতেও শিখাকে নির্যাতন করা হতো। এরপর সেখানকার এক নারীর হাত ধরে শিখা চলে আসে খুলনায়। প্রথমে নগরীর  জোড়াকল বাজারের একটি বাড়িতে কাজ জোটে তার। এরপর প্রায় ১৫ বছর ধরে নগরীর নিউ মিয়াপাড়া রোডের আবুল মিয়ার বাড়িতে আসে সে। ওই বাড়ির মালিক আবুল মিয়ার মেয়ে মার্জিয়া সুলতানা বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে স্থানীয় একজনের মাধ্যমে শিখা আমাদের এখানে কাজ করতে আসে। তারপর থেকে আমাদের এখানেই আছে। বর্তমানে সে এখানকার ভোটার।

এদিকে তুলির মৃত্যুর পর শিখার সঙ্গে তার পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দেড় যুগ ধরে শিখার খোঁজ জানতেন না তারা। শিখার বাবা মারা গেছেন তিন বছর আগে। মেয়ের সন্ধান পেতে ঢাকার মিরপুর থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন তিনি। ১৫ বছর পর হারানো মেয়েকে মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিলেন যিনি, তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনার জেলা সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো. মোমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, একজন সাংবাদিক দেড় মাস আগে তার কাছে এক লোককে পাঠান। তার কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন হারিয়ে যাওয়া একটি মেয়ে মিয়াপাড়ার একটি বাড়িতে ১৫ বছর ধরে কাজ করছে। এরপর তারা মেয়েটির ঠিকানা উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জের ওই গ্রামের দুটি মসজিদে মাইকিং করেন। মাইকিং শুনে শিখার পরিবার সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ করে। দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ চলতে থাকার এক পর্যায়ে মঙ্গলবার ভোরে খুলনায় আসেন শিখার মা রহিমা খাতুন, চাচা বেলাল ও প্রতিবেশী মনজুরুল হক।

এরপর খুলনা থানার ওসি শফিফুল ইসলামসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা আবুল হোসেনের বাড়িতে গেলে মা-মেয়ের মিলনদৃশ্যের অবতারণা ঘটে। রহিমা খাতুন বলেন, মেয়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। এক ঈদের আগে মেয়েকে হারিয়েছি। আরেক ঈদের আগে মেয়েকে আদর করতে পারলাম। ওকে এবার একটা ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিতে চাই। শিখা বলেন, অনেক অনেক আনন্দ লাগছে। আল্লাহর কাছে সব সময় মা-বাবার জন্য  দোয়া করেছি। মাকে তো পেলাম; কিন্তু একটাই দুঃখ, বাবাকে আর কোনোদিন  দেখতে পাব না। চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে শিখা মেজো।-সমকাল

২৯জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে