সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬, ১০:১৮:৪০

মেয়ে উপোস থেকে জিপিএ-৫ পেলেও চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না বাবা-মার

  মেয়ে উপোস থেকে জিপিএ-৫ পেলেও চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না বাবা-মার

কুড়িগ্রাম : তাহমিনা আক্তার। এবার রৌমারীর যাদুরচর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। এর আগে এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

নিজেদের কোনো জমিজমা নেই। নেই বসতভিটাও। আত্মীয়ের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছে। বাবা তারা মিয়া পেশায় একজন শ্যালো মেশিনের মিস্ত্রি। কিন্তু এখন তিনিও আর আগের মতো কাজ পায় না।

তাহমিনার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার বাবা-মার সঙ্গে। মা নারগিস বেগম বলেন, ‘খুব কষ্ট কইরা মেয়ে লেখাপড়া করাইতেছি। প্রায় সময়ই ঘরে খাবার থাকেনা। মেয়ে না খেয়েই কলেজে গেছে। ভালো একটা পড়ার টেবিল নাই। ভাঙা টেবিলে বইসা পড়ে কিন্তু লেখার সময় সমস্যা হয়। ওর বাপের এখন কামাই রোজগার নাই বললেই চলে। কিন্তুক মেয়ে কয় আমি আরো লেখাপড়া করব।’

বাবা তারা মিয়া বলেন, ‘মেলা বিয়ার সমন্ধ আইসে। মেয়ে তো বিয়েতে রাজি হয় না। আমি তো খরচ দিবারই পারি না। মেয়েক নিয়া এখন বিপদে পড়েছি। এ যাবত তাও কোনো রকমে চলছে কিন্তু এখন শহরের ভালো কলেজে ভর্তি হতে অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। অত টাকা দিবার সামর্থ নেই আমার। তারপরও আত্মীয় স্বজনদের কাছে চাইছি। মেয়ের চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না।’

তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা মা খুবই গরীব। এ ভাগ্যকে মেনে নিয়েই আমি অনেক কষ্ট করে রাত জেগে লেখাপড়া করেছি। কলেজে যাওয়ার সময় খাবার না থাকায় উপোস থাকতে হয়েছে। রাতে কোরোসিন তেল না থাকায় যখন লেখাপড়া করতে পারিনি তখন শুধু কাঁদছি। আমার লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছা। জানি না আমার ভাগ্যে লেখাপড়া আছে কিনা। আপনারা তো জানেন আমার বাবা-মার কিছুই নেই। মামার জায়গায় বাড়ি করে আছি আমরা।’

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার খুব ইচ্ছা আমার। কিন্তুক ভর্তি হওয়ার খরচই তো নাই। তারপর চেষ্টা থাকবে আমার। সমস্যা হলো আমার বাবা মাকে নিয়ে তারা কখন যে আমার বিয়া ঠিক করে ফেলে। একদিকে টাকার অভাব অন্যদিকে বিয়া নিয়ে আমি এখন বিপদের মধ্যে পড়েছি।’

যাদুরচর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলম জানান, শারমিন আক্তার মেধাবী। তার পারিবারিক দুরাবস্থার জন্য আমরাও কলেজ থেকে সুযোগ সুবিধা দিয়েছি। তাকে একটু নার্সিং করলে ভবিষ্যতে খুবই ভালো করবে।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯ উপজেলায় এবারে এইচএসসিতে ১৫৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। জেলায় সবচেয়ে ভাল ফল করেছে কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ। এ কলেজ থেকে সর্বোচ্চ ৬৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৬৪ জন এবং মানবিক বিভাগে ৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফল কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের। এখানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ জন।

এছাড়া কুড়িগ্রাম সদরের খলিলগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১ জন, চিলমারী উপজেলায় ৮ জন, নাগেশ্বরী উপজেলায় ১২ জন, রাজারহাট উপজেলায় ১ জন, ফুলবাড়ী উপজেলায় ২ জন, উলিপুর উপজেলায় ১০ জন, রৌমারী উপজেলায় ১৩ জন, রাজিবপুর উপজেলায় ৩ জন ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় ৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। -জাগো নিউজ
২২ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে