এক অসহায় নারীর কান্না থামানোর যেন কেউ নেই। কাঁদছেন আর চোখের সামনে বিলীন হওয়ার পথে তার একমাত্র বাড়িটি। জমি বলতে তেমন কিছুই নেই। এমন অবস্থায় যাবেন কোথায়? আর কীভাবে কাটবে তার পরিবারের দিনগুলি! ভেবে কোন কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না।
‘অর্ধেক বাড়ি নদীত, অর্ধেকটা নদীত উপ্রেত, যামো কুতি (কোথায়)। নিজের জাগা জমি কিছুউ নাই। মানষের জমি চাইলেও দেয়না। দেয় কাঁই? সগারে একে অবস্থা।’ আধ ভাঙা ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছেন সাধনা বেগম (৩২)। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের সাতালস্কর গ্রামের মন্টু মিয়ার স্ত্রী সাধনা বেগম। তিস্তার ভাঙণে তাদের বাড়ির অর্ধেকটা ভেঙে গেছে।
তার পাশেই সাতালস্কর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। দুটি কক্ষ কিনারে। তিনটি কক্ষ গত বর্ষায় তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে। সম্প্রতি ভেঙে গেছে দেড় কোটি টাকার একটি বাঁধও। এবার বর্ষা আসলে ভাঙণ বাড়বে এলাকায়। এছাড়াও বাঁধ না থাকায় তিস্তার পানি দ্রুত ঢুকে পড়বে লোকালয়ে। তাই বাঁধ সংস্কারের দাবীতে মানববন্ধনও করেছে স্থানীয়রা। একই সাথে দাবী তুলছে নদী শাসনেরও।
আজ রবিবার দুপুরে সাতালস্কর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে দুই দিকে মানববন্ধন করে ভাঙণ কবলিতরা। দীর্ঘ সময়ের মানববন্ধনে নারী-শিশুসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেয়। এতে বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম সরদার, ইউপি সদস্য আবু তালেব মোল্লা, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষক মাহতাব হোসেন, বিমল কুমার সাহাসহ সহস্রাধিক মানুষ।
ইউপি সদস্য আবু তালেব মোল্লা বলেন, জাপান-বাংলাদেশের অর্থায়নে গত বছর সাদুয়া দামারহাট হতে বগলাকুড়া-সাতালস্কর হয়ে পশ্চিম বজরা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে এলজিইডি। বাঁধটি নির্মাণ শেষ হতে না হতেই তিস্তায় বিলীন হয়ে যায় এর বেশিরভাগ অংশ। এরপর ভাঙণের তীব্রতা বেড়ে যায় ওই এলাকায়।