বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২, ১১:২৬:০০

৩৭ বছর বয়সে দাখিল পাস করলেন গোলাপী বেগম

৩৭ বছর বয়সে দাখিল পাস করলেন গোলাপী বেগম

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কুড়িগ্রাম সদরে গোলাপী বেগম নামে এক নারী ৩৭ বছর বয়সে দাখিল পাস করেছেন। তিনি কুড়িগ্রাম কামিল আলিয়া মাদরাসা থেকে জিপিএ ৪.৯৩ পেয়ে পাস করেছেন। সোমবার দুপুরে ফলাফল প্রকাশের পর তার বাড়ি ও কর্মস্থলে হইচই পড়ে যায়।

গোলাপী বেগমের বাড়ি কুড়িগ্রাম পৌরশহরের তালতলা গ্রামে। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের একজন ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারী।  জানা গেছে, শেফালী বেগমের জন্ম ৩ মার্চ ১৯৮৫। তার বর্তমান বয়স ৩৭ বছর। ২০০২ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর বাড়িতে গিয়ে আর পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। তার স্বামী লুতফর রহমান। তিনিও কুড়িগ্রাম পৌরসভার একজন ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারী। 

সংসারে অভাবের কারণে ২০১৬ সালে গোলাপী বেগম কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। কলেজে কাজ শুরু করার পর তিনি শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারেন। তিনি দেখেন, তার থেকে কম বয়সের অনেক কর্মচারী লেখাপড়ার কারণে তার থেকে ভালো জায়গায় কাজ করছে। পরে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিনের অনুপ্রেরণায় আবার পড়ালেখা শুরু করেন। তারপর ২০২০ সালে কুড়িগ্রাম কামিল আলিয়া মাদরাসায় ভোকেশনাল কোর্সে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০২২ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি দাখিল পাস করেন।

পরীক্ষায় পাসের অনুভূতি জানতে চাইলে গোলাপী বেগম বলেন, ফলাফলের দিন সকাল থেকে মনটা ছটফট করছিল। আমি কলেজে ছিলাম। কলেজের ইংরেজি বিভাগের কম্পিউটারে রোল নম্বর দিয়ে জানতে পারি, আমি পাস করেছি। এই বয়সে এসেও যে আমি পাস করতে পারব ভাবতে পারি নাই। 

তিনি বলেন, আমার খুব ভালো লাগছে। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ স্যারের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। ভবিষ্যতে আরও পড়তে চান কি না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, কলেজ থেকে যদি চাকরিতে কোনো বাধা না আসে, তবে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও মাস্টার্স করব।

তিনি আরও বলেন, আমি পাস করায় স্বামী খুব খুশি হয়েছে। ছেলে ঢাকায় থাকে। আমার জন্য একটা শীতের পোশাক কিনে কুরিয়ারে পাঠিয়েছে।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, গোলাপী বেগম এই কলেজের ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারী। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়ে যায় শুনেছি। কিন্তু তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহের কথা জানতে পেরে আমি তাকে উম্মুক্ত কোর্সে ভর্তি হয়ে আবার পড়ালেখা করার পরামর্শ দেই। ২০২২ সালের দাখিল পরীক্ষায় সে ৪.৯৩ পেয়ে পাস করেছে। 

কুড়িগ্রাম কামিল আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. নুর বখত জানান, ৪০ বছর বয়সের যে কোনো শিক্ষার্থী ভোকেশনালে ভর্তি হতে পারেন। এ বছর কুড়িগ্রাম কামিল আলিয়া মাদরাসায় ভোকেশনাল কোর্সে ৪৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩১ জন পাস করেছে। গোলাপী বেগম তাদের একজন। তার রেজাল্ট ভোকেশনাল কোর্সে সবার থেকে ভালো। তিনি আগামী দিনে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে সফল হোন, আমরা সেই দোয়া করি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে