রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০২৩, ০২:১৩:১৬

৪৬ বছর বয়সে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন

৪৬ বছর বয়সে  দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন

এমটিনিউজ ডেস্ক: অদম্য ইচ্ছে থাকলে অনেক অসাধ্য সাধন করা যায়। ৪৬ বছর বয়সে  দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রহিমা বেগম (৪৬)। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ভাতাভুক্ত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে কর্মরত। তার পিতা আছর উদ্দিন।

স্বামী ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল সরকার মজনু। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পৌরসভার খলিলগঞ্জ নাজিরা সরকার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) এসএসসি সমমান পরীক্ষায় কুড়িগ্রাম কাঁঠালবাড়ি মহিয়্যুস সুন্নাহ মহিলা দাখিল মাদরাসা থেকে এবারে দাখিল পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ হতে ৩.৬০ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

জানা যায়, দারিদ্র্যের কষাঘাতে পড়ে রহিমা বেগম চতুর্থ শ্রেনি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও আর পড়া হয়নি।
অল্প বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। সংসার জীবনে তার রয়েছে এক মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। আর মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।

সংসার জীবনের দীর্ঘ ঘানি টানতে টানতে সন্তানদের নিয়ে স্কুল যাওয়া আসা করতে আবারও পড়াশোনায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন তিনি। পরে তিনি একটি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করেন। কুড়িগ্রাম কাঁঠালবাড়ি মহিউস সুন্নাহ মহিলা দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিলে ৩.৬৭ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এ বয়সে পাস করায় পরিবার আত্মীয় স্বজন ও সহকর্মীদের অভিনন্দন ও ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছেন রহিমা বেগম। রহিমা বেগম বলেন, লোকলজ্জা আর বয়সের ভয় না করে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।

বিয়ের আগে মাদরাসা লাইনে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। কিন্তু অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় আর পড়াশোনা করা হয়নি। মনের আকাঙ্ক্ষা থেকে আবারও সংসার জীবনে এসে পড়াশোনা শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ, এ বছর এসএসসি পাস করলাম। আমার পড়াশোনা করার ব্যাপারে স্বামী-সন্তান ও সহকর্মীরা উৎসাহ দিয়েছেন। আমার ইচ্ছে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার।

রহিমা বেগমের মেয়ে মজিদা আক্তার পপি বলেন, মা এই বয়সে এসে সংসার ও চাকরি করার পরও পরীক্ষায় পাস করবে ভাবিনি। এই খুশি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার সামনে এগিয়ে যাবে এজন্য সবার কাছে দোয়া চাই। 

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ মির্জা মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, রহিমা বেগম আমার কলেজের একজন কর্মচারী। তিনি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মাদরাসায় দাখিল শ্রেণিতে ভর্তি হন। এ বছর এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৩.৬০ অর্জন করেছেন। 

বয়স কিংবা কোনো বাঁধাই তাকে আটকাতে পারেনি। পড়াশোনায় মাঝপথে কিংবা শুরুতে থেমে যাওয়া অন্য সকল নারী-পুরুষদের জন্য রহিমা একটি প্রেরণার উৎস। যেকোনো বয়সেই যে শিক্ষা অর্জন করা যায় রহিমা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি আরো বলেন, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রহিমাকে অভিনন্দন এবং সে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাইলে তাকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে। 

মাদরাসা সুপার রেজাউল করিম বলেন, রহিমা বেগমসহ আমার মাদরাসা থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী এবার দাখিল পরীক্ষায় পাস করেছেন। রহিমা বেগম ২০২০ সালে এই মাদরাসায় ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে