রবিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০৯:৪৫:৩৩

গায়েবি সাপ আতঙ্কে গ্রামছাড়া ৫ হাজার মানুষ!

গায়েবি সাপ আতঙ্কে গ্রামছাড়া ৫ হাজার মানুষ!

কুষ্টিয়া : গায়েবি সাপ আতঙ্কে গ্রামছাড়া অন্তত ৫ হাজার মানুষ! বন্ধ হয়ে গেছে ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে যাওয়া।  ঘটনাটি কুষ্টিয়ায়।  এলাকাবাসীর দাবি, অদৃশ্য সাপ বাতাসের মতো গায়ে পড়ে কামড় বসিয়ে চলে যায়।  কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এটি মাস সাইকোজেনিক ইলনেস বা গণমানসিক অসুস্থতা।

চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি প্রথম ঘটে চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর।  এদিন রাতে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের জায়েদপুর গ্রামের মকছেদ আলীর ছেলে বাবর আলী সাপের কামড়ে মারা যায়।  এরপর থেকেই লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

লোকজনের দাবি, হঠাৎ করেই শরীরের কোনো স্থানে মশার কামড়ের মতো অনুভব হয়।  কিছুক্ষণের মধ্যে অসহনীয় জ্বালা-পোড়া, শরীর ঝিনঝিন, মাথা ঘোরা ও চোখে অন্ধকার নেমে আসে।  

একই ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে একই উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের জেয়ার্দার পাড়া ও পশ্চিম পাড়া এলাকায়।  নারীদের মধ্যে এ আতঙ্ক আরো বেশি।

গ্রামবাসীর দাবি, এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষকে সাপে কামড়িয়েছে।  এসব জিন সাপের কাজ।  এ সাপ দেখা যায় না কিন্তু বাতাসের মতো আসে।  দংশন করে আবার চলে যায়।  সাপের কামড়ে মাথা ঘোরা, পায়ে জ্বালা-পোড়া, বমি ও খিঁচুনি হয়।

তাদের মতে, একমাত্র কবিরাজের মাধ্যমেই বিষ নামিয়ে সুস্থ হওয়া সম্ভব।  কবিরাজ বাড়িতে সাপের বিষ নামাতে গ্রামবাসী ভিড় করছে।  এ সুযোগে কবিরাজরা টু পাইস কামিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কবিরাজের পাশাপাশি সাপের দেবী মা মনসাকে তুষ্ট করতে চলছে মসজিদে শিরনি বিতরণ ও দোয়া অনুষ্ঠান।  অনেক স্থানে চলছে পদ্ম পূরান পালাগন।  

গায়েবি সাপের কামড়ের শিকার সাহেলা খাতুন গণমাধ্যমকে জানান, হঠাৎ করেই মশার কামড়ের মতো অনুভব হয়।  কিছুক্ষণের মধ্যে অসহনীয় জ্বালা-পোড়া।  সেইসঙ্গে শরীর ঝিনঝিন করা, মাথা ঘোরা ও চোখে অন্ধকার নেমে আসে।  

সবাই বলছেন, সাপে কামড়িয়েছে।  কিন্তু সাপকে তো কামড়াতে দেখলাম না। কবিরাজরাও বলছেন, সাপে কামড়িয়েছে।  

সাপ আতঙ্কে গ্রামছাড়া অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।  আতঙ্কে অনেকেই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।  সাপের ভয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী।  

এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও বিষয়টি বিশ্বাস করছেন।  এদিকে সাপ আতঙ্ক  দূর করতে এলাকায় মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।  তারা এলাকায় সচেতনতামূলক কাজ করছেন।

এটাকে গণমানসিক অসুস্থতা আখ্যায়িত করে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।  

কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আকুল উদ্দিন বলেন, এটা আসলে কোনো রোগ নয়।  এটা মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক।  কিছু মানুষ আছে যারা এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ গতকাল এলাকা পরিদর্শন করে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
৪ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে