শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:২৩:০৩

যেন সাধুর হাট!

 যেন সাধুর হাট!

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া আখড়াবাড়ি যেন সাধুর হাট! আখড়াবাড়ি থেকে ভেসে আসছে বিষাদের সুর লহরি। এ যেন স্বজন হারানোর বিষাদ। যেন গুরু-ভক্তের বিচ্ছেদ লীলার বিষাদ। মনের মানুষকে খোঁজার পদপানে তারা। কুষ্টিয়া শহরের ব্যস্ততম রাস্তা এনএস রোড। শুক্রবার মধ্যরাতেও মহাব্যস্ত। ব্যস্ত থাকবে আরো ক’দিন। ভ্যান, রিকশা, নছিমন, করিমন আর অটোরিকশায় পুরো ঠাসা। পায়ে হাঁটার মানুষেরও কমতি নেই। এনএস রোড হয়ে বড়বাজার পেরুলেই মোহিনী মিলের সরু রাস্তা। সুর-শব্দ দুইয়ে মিলে একাকার। সুরে সুর মিলাচ্ছে হেঁটে চলা লালন ভক্তরাও। ওরা যেন দোহারি, যেন সাধক বনে যেতে চাচ্ছে। দেখলে মনে হবে সেখানে বসেছে সাধুর হাট। একশ’ পঁচিশ বছর আগে এদিনে ধরা থেকে বিদায় নেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাউল লালন ফকির। লালনের তিরোধান উপলক্ষে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় লালন মেলার। এরই ধারাবাহিকতায় ১ কার্তিক থেকে ৫ কার্তিক পর্যন্ত (১৬ অক্টোবর-২১ অক্টোবর) পাঁচ দিনব্যাপী চলছে লালন মেলা। মেলার প্রথমদিন থেকেই সাধক-বাউলের পদচারণায় মুখরিত হয়ে কালীগঙ্গার তীর। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সাধক, আশেকানদের এক মহামিলন। পুরো আখড়াবাড়িই হয়ে উঠেছে সাধকের তীর্থস্থান। লালন সাঁইজি জীবনের শেষবেলা পর্যন্ত অনুরাগ দিয়েই সাধন-ভজন করেছেন। অনুরাগের মধ্যদিয়েই মনের মানুষ খুঁজেছেন সাঁইজি। খুঁজে ফিরেছেন ‘মানুষ রতন’, যাকে কখনও ‘মনের মানুষ’, ‘পড়শী’, ‘অচিন পাখি’ আবার কখনও ‘সহজ মানুষ’ বলে ডেকেছেন লালন ফকির। লালন ভক্তরাও ‘মনের মানুষ’ খুঁজে ফিরতে দিশেহারা। পরনে সফেদ লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া আর মাথায় গেরুয়াই মানুষগুলোর মনের খবর বলে দিচ্ছে। আবার কেউ এসেছেন এক কাপড়েই। নারীর পরণেও সাদার ছড়াছড়ি। হাজারো সাধু-ভক্ত মনের মানুষ খুঁজে ফিরছেন। খুঁজছেন নিজেকে, নিজের আত্মাকে। যে আত্মায় ভর করে আছে পরমাত্মা। পরমাত্মার দর্শন মানেই মহামিলন। এমন মিলনের সাধনায় সাধকরা সর্বহারা। সংসার, সমাজ সব হারিয়ে অন্ধের মতো মনের মানুষের সন্ধানে। ১৭ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে