নিউজ ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়ার দুটি স্কুলের ছাত্রীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল ভ্যানচালক সাদ্দাম। পুলিশ তাকে ধরতে পারছিল না।
একদিন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পপি নিজেই দুই কিলোমিটার সড়ক দাবড়ে ধরে ফেলে সাদ্দামকে। তারপর এলাকাবাসীর সহায়তায় পুলিশে দেওয়া হয় সেই ইভটিজার বখাটেকে।
গত ৮ অক্টোবর সকালের এ ঘটনার পর সদর উপজেলার বুজরুক বাখইল গ্রামের পপি এখন এলাকার মানুষের কাছে গর্বিত নাম। বখাটে সাদ্দামকে ধরার পর সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় পপিকে কিল-ঘুষি মারলেও পপি তাকে ছাড়েনি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পপি খাতুন। বুজরুক বাখইল গ্রামে তাদের বাড়ি। গ্রামের আদর্শ কৃষক শরিফুল ইসলামের মেয়ে সে।
ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিদিনের মতো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পরীক্ষা শেষে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল পপি। ওই সময় বখাটে ভ্যানচালক রাস্তায় পপিকে দেখে ভ্যান থামিয়ে অশ্লীল কথা বলে।
পপি সঙ্গে সঙ্গে তাকে কষে থাপ্পড় মারে। থাপ্পড় খেয়ে বখাটে ভ্যান নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যেতে থাকে। পপিও নাছোড়বান্দা। সে তাকে তাড়া করে। ভ্যানের পেছনে পপিকে এভাবে দৌড়াতে দেখে এলাকার মহিলারা পপিকে অনুসরণ করে। এভাবে দুই কিলোমিটার তাড়া করার পর পপি ওই বখাটেকে ধরে ফেলে। অন্য মহিলারা ও পপি তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে পপি পুলিশের এক কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে খবর দেয়। পুলিশ এসে সাদ্দাম হোসেন নামের ওই বখাটেকে আটক করে কুষ্টিয়ায় নিয়ে যায় এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠায়।
সাহসী পপি জানায়, এ ঘটনার পর অনেকেই আমাকে অভিনন্দিত করেছে আবার অনেকেই আমাকে বলেছে—তুমি মেয়ে, এটা তোমার ঠিক হয়নি। কিন্তু আমি জানি, আমি কোনো ভুল করিনি। আমি একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি এবং আমার দেখাদেখি অন্যরাও এভাবে প্রতিবাদ করতে শিখবে। আমি মনে করি, প্রতিটি মেয়েকে সচেতন হতে হবে এবং বখাটেদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আমি গরিব ঘরের মেয়ে। অনেক বড় কিছু তো হতে পারব না। তবে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ যাতে করতে পারি, এই ইচ্ছা আমার আছে।
স্থানীয়রা জানান, বখাটে সাদ্দামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এলঙ্গী গ্রামে। তার পিতার নাম রেজাউল হক। সে উজানগ্রামে বিয়ে করে ঘরজামাই থাকত। ঝাউদিয়া ও উজানগ্রাম পাশাপাশি ইউনিয়ন। বখাটে সাদ্দাম দুটি এলাকার বিভিন্ন স্কুলের মেয়েদের প্রতিদিন উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শিক্ষক ও ছাত্রীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিল।
পপির সহপাঠী কাজল হোসেন, শাপলা খাতুন ও পিয়াস জানায়, পপি অনেক ভালো মেয়ে। ও অনেক সাহসী, ছাত্রী হিসেবেও মেধাবী। ও যা করেছে, তাতে আমাদের সবার মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। আমরা চাই—আমরা সবাই যেন এভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারি।
পপির স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ কে এম রবিউল ইসলাম জানান, আমি শুনেছি পপি একজন ইভটিজারকে ধরে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমি মনে করি, সে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আরো অনেক মেয়েকে সাহায্য করল।
ঝাউদিয়া বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার রায় জানান, পাশের গ্রামের বখাটে যুবক স্কুলে যাওয়া-আসার সময় ছাত্রীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত ও হয়রানি করে আসছিল। তাকে ধরার জন্য আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছিলাম। পুলিশও তাকে ধরার চেষ্টা করছিল, তবে পপি সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ওই বখাটেকে ধরে ফেলে।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার অফিসার ইনচার্জ রতন জানান, আমরা ওই বখাটেকে ধরার চেষ্টা করছিলাম। তবে ঘটনার দিন রাস্তায় হয়রানির চেষ্টা করলে এক ছাত্রী নিজেই সেই বখাটেকে জাপটে ধরে গ্রামবাসীর হাতে তুলে দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর আমরা তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে বিচারক ইবাদত হোসেন ছাত্রীদের হয়রানি করার অপরাধে ওই বখাটেকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। এ ধরনের ঘটনা আর কেউ ঘটালে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস